রাজীবুল হাসান, গাজীপুর : গাজীপুরের শ্রীপুরে সরকারি বন প্রভাবশালীদের দ্বারা দখল হচ্ছে। রাতারাতি গড়ে উঠছে নানা অবৈধ স্থাপনা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান। কেউ কেউ আবার রাতের আঁধারে সীমানা প্রাচীর করে নিজের করে নিচ্ছে সরকারি বন। দখলকৃত বনাঞ্চল মুক্ত করতে চাইলেও পেরে উঠছে না সংশ্লিষ্ট বনকর্মকর্তারা। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে ভাওয়াল বনের সৌন্দর্য ও সবুজ বৃক্ষরাজী। অন্যদিকে বিপন্ন হচ্ছে বন্যপ্রাণি।

এভাবে চলতে থাকলে এক সময় সরকারি বন খুঁজেই পাওয়া যাবে না। অনেকের ধারণা বিভিন্ন সময়ে ব্যক্তিমালিকানায় এসব বনভূমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়। আর ভূমি দপ্তরের মাধ্যমে বনের জমি দখলদারদের নামে তা নথিভুক্ত করা হয়। মূলত দখলের প্রবণতাটা শুরু হয়েছে তখন থেকেই। সম্প্রতি গাজীপুরের শ্রীপুরে মাওনা ইউনিয়নের রাথুয়া মৌজায় প্রায় ১’শ বিঘা বনের গাছ প্রকাশ্যে কাটা হচ্ছে এমন অভিযোগে গিয়ে দেখা মিললো তার সত্যতা । এলাকার কিছু অসাধু ব্যক্তি এবং বনবিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মদদে দিনের পর দিন গাছ কেটে ভূমি দখল করার চেষ্টা চলছে।

পুরো এলাকা যেন মূরুভূমি হয়ে গেছে! শ্রমিক দিয়ে গজারি গাছ কেটে, মাটি থেকে শিকড়-বাঁকর তুলে পুরো বন দখল করে নিচ্ছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালি চক্র । এলাকাবাসীর অভিযোগ ৩ কাটা করে প্রতিজনকে প্লট দেওয়ার কথা বলে ৫০/৮০ হাজার টাকা করে নেয় স্থানীয় বিসু মিয়ার পুত্র আতাউর, শামসুর মেম্বার ও তার সহযোগীরা। বনের গাছ বিক্রি করে এর আগেও বহু মামলাও হজম করে বসে আছে ওই বন দস্যুরা। কিছুদিন পূর্বেও মাওনা,রাথুয়া,বাঁশবাড়ী,ধনুয়ায় মৌজায় বন ভূমির পরিমান ছিল প্রায় ৪ হাজার একর। যার প্রায় ৮শ একর বেদখল হয়ে গেছে। অন্যদিকে শিরিশগুড়ি প্রায় ৫ বিঘা সরকারি বন দখল করে দোকানপাট বসিয়েছে মাওনা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো.রুসমত আলী। রুসমতের মোড় নামে বাজারের নাম করনও করেছেন ওই ইউপি সদস্য। জানা যায়, ওই ইউপি সদস্য’র বিরুদ্ধে বন বিভাগের প্রায় ৪০ টি মামলাও রয়েছে।

এ বিষয়ে শিমলাপাড়া বিট অফিসার মো.আশরাফুল আলমের কাছে জানতে চায়লে তিনি বলেন, অভিযোগ পেয়ে ওই ইউপি মেম্বারকে ঘর তৈরি করতে নিষেধ করেছি,কে শোনে কার কথা। উল্টো আরো আমাকে হুমকি দিয়ে বলছে এখানে চাকরী করতে হলে আমার কথা মানতে হবে না হলে! রুসমত আলীসহ আরো ৫ জনের বিরুদ্ধে জবর দখলারদের মামলা দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, কয়দিন আগেও ফুলানিরসিট এলাকায় বন জঙ্গলে ভরপুর ছিল। দিনে রাতে বনের গাছ কায়টা সব শেষ দিছে। এলাকার কিছু দালালদের কারনে এমন হয়ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

এছাড়াও শ্রীপুরের কেওয়া,ভাংনাহাটী,সাতখামাইর, বিট অঞ্চল সরেজমিনে ঘুরে পাওয়া গেছে, আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। শ্রীপুরে গত এক দশক আগেও বনভূমির পরিমাণ ছিল প্রায় ২৫ হাজার একর। এ থেকে চার হাজার একর জমিতে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কিন্তু বেদখল হয়ে গেছে আরও ৬ হাজার একর বনভূমি। জমির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় দস্যুদের লোলুপ দৃষ্টি শুধু বনভূমির ওপর। স্থানীয়রা জানান, দখল করে নেওয়া এসব জমি কিছুদিন আগেও গজারি গাছে ভরপুর ছিল। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দুই দশকে এ অঞ্চলে বনভূমির অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যাবে বলে ধারণা অনেকের।

শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো.মোজাম্মেল হোসেন বলেন, রাথুয়া মৌজায় প্রায় ৫ হেক্টর জায়গায় রিকোভারি করে কাজ করা হচ্ছে। কোথাও কেউ বেআইনিভাবে গাছ কাটলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(আরএইচ/এএস/সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৬)