নিউজ ডেস্ক : ইতালির রোমে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) হেডকোয়ার্টার্সে মিনিস্ট্রিয়াল মিটিংয়ে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। সোমবার এ মিটিং শুরু হয়।
 

এফএও’র ‘লং-টার্ম কমোডিটি প্রাইজ ট্রেন্ডস অ্যান্ড সাসটেইনেবল এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট’ সেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন। উদ্বোধনী বক্তৃতায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশের অভিজ্ঞার গল্প বিশ্বকে শোনান তিনি।

তোফায়েল বলেন, স্বশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ১৯৭১ সালে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিলো, শোষণ ও ক্ষুধামুক্ত সোনার বাংলা গড়ার। শূন্য হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন জাতির পিতা। সেসময় দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের খাদ্যের অভাব ছিলো। আজ বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের খাদ্যের অভাব নেই। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, প্রয়োজনের তুলনার অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদিত হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশ এখন খাদ্য রফতানি করছে। খাদ্য রফতানিকারক দেশের তালিকায় এখন বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে এফওএ’র হোসে গ্রাজিয়ানো দ্য সিলভা বক্তব্য রাখেন।

সম্মেলনে তোফায়েল আহমেদ বলেন, কৃষি অর্থনীতিনির্ভর বাংলাদেশে ৪০ ভাগ মানুষই কাজ করছে এ সেক্টরে। স্বাধীনতার পর জিডিপিতে কৃষিখাতের অবদান ছিলো ৭৮ ভাগ, বর্তমানে এ অবদান ১৪.৯৫। বাংলাদেশের উন্নয়নে ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে এসডিজি’র ৮২ ভাগ অর্জন করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশের বর্তমান ইকনোমিক গ্রোথ ৭.১ ভাগ, এর মধ্যে রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি ৯.৭৭ ভাগ। যা বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি তিন ভাগ।

দেশের কৃষি উন্নয়ন যুগোপযোগী করার ক্ষেত্রে আরও অনেক কিছু করার রয়েছে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। কৃষির আধুনিকায়ন, মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা, গবেষণা, উৎপাদিত কৃষিপণ্য যথাযথ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ জরুরি। সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণের অভাবে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ কৃষি পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে এফএও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এ ধরনের সহযোগিতা এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্যও প্রয়োজন।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব মোতাবেক, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের যোগ্যতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের বর্তমান রফতানি ৩৪.২৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালে দেশের ৫০ বছর পূর্তিতে এ রফতানির পরিমাণ দাঁড়াবে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এর মধ্যে শুধু তৈরিপোশাক থেকেই আসবে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে তৈরিপোশাক কারখানাগুলো কমপ্লায়েন্স করা হয়েছে। এতে বিপুল পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে, কিন্তু তৈরি পোশাকের মূল্য বাড়ানো হয়নি। পণ্যের ও শ্রমের উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত না হলে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে পণ্যের উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত হওয়া জরুরি।

এরপর বাণিজ্যমন্ত্রী এফওএ’র মহাপরিচালক হোসে গ্রাজিয়ানো দ্য সিলভার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন। তিনি মহাসচিবকে অবহিত করে বলেন, জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে জমির পরিমাণ কমলেও গবেষণার মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল কৃষি পণ্য উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকেই এফওএ’র সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে বাংলাদেশ কাজ করে যাচ্ছে। মহাপরিচালক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন এবং সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি এফএও’র পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে সবধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন।

এসময় বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন রোমে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আব্দুস সোবহান শিকদার ও ইকনোমিক মিনিস্টার ড. মো. মফিজুর রহমান।

এ মিটিংয়ে যোগ দিতে রবিবার ইতালি যান বাণিজ্যমন্ত্রী। এফএও’র মহাপরিচালক জোসে গ্রাজিয়ানো দা সিলভার আমন্ত্রণে তিনি মিটিংয়ে যোগদান করেন। এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, লং-টার্ম কমোডিটি প্রাইজ ট্রেন্ডস অ্যান্ড সাসটেইনেবল এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট”। আগামী ০৭ অক্টোবর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

(ওএস/এএস/অক্টোব ০৪, ২০১৬)