প্রবীর সিকদার :


ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিপুল ঘোষ গুরুতর অসুস্থ হয়ে ঢাকার ইব্রাহিম কার্ডিয়াকে চিকিৎসাধীন। হাইব্রিড উৎপাতে কোণঠাসা ও বিপর্যস্ত বিপুল ঘোষ অনেকটাই একা একা হাসপাতালের বিছানায় বেঁচে থাকার লড়াই করছেন। চূড়ান্ত অবহেলায় হাসপাতালের বিছানায় পড়ে থাকা কেই এই বিপুল ঘোষ?

বিপুল ঘোষ ১৯৭৩ সালে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তারপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রকাশ্য প্রতিবাদ করে খুনিদের রুদ্ররোষে পড়েন। জে.জিয়ার নির্দেশে সেই বছরেই তাকে আটক করা হয়। তাকে ফরিদপুর কারাগার থেকে পাঠানো হয় যশোর কারাগারে । যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে তিনি একটানা সাড়ে চার বছর কাটিয়েছেন এবং ভোগ করেছেন অবর্ণনীয় কারানির্যাতন। এরশাদের স্বৈরশাসন আমলে তিনি ১৭ বার কারাগারে গিয়েছেন।

একপর্যায়ে তিনি ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় হয়ে উঠেছিলেন একজন সত্‍ ও যোগ্য রাজনীতিবিদ। তিনি দীর্ঘ ১১ বছর ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য নির্বাচিত করেন। বিপুল ঘোষ শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত রাজনৈতিক কর্মী। শেখ হাসিনার যেকোনো নির্দেশ বাস্তবায়নে তিনি কখনোই পিছপা হননি। বঙ্গবন্ধুর জন্মভূমি ফরিদপুরে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বিপুল ঘোষ ফরিদপুরের মাটিতে পা ফেলতে দেননি বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল ফারুককে। । সেই বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী বিপুল ঘোষ এখন হাইব্রিড আওয়ামীলীগ নেতাদের দাপটে অবহেলিত ও বঞ্চিত। নিজের সুচিকিৎসার আর্থিক সামর্থ্য আজ তাঁর নাই।

উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিপুল ঘোষকে অবিলম্বে বিদেশে পাঠানোর দাবি করেছেন তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। বিপুল ঘোষ হৃদযন্ত্রের জটিলতা নিয়ে কয়েকদিন ধরেই ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

হাসপাতাল সূত্রে বলা হয়েছে, তাঁর অবস্থা সংকটজনক। সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে জরুরি ভিত্তিতে ৫ অক্টোবর সকালে বিপুল ঘোষের হৃদযন্ত্রে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শারিরীক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বিপুল ঘোষের হৃদযন্ত্রের জটিল অপারেশন সেদিন করা যায়নি। ইব্রাহিম কার্ডিয়াকের প্রফেসর ডা. মাসুম সিরাজ জানিয়েছেন, আরো ২/৩ দিন পর্যবেক্ষণে রাখার পর অপারেশনের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

এই খবর পেয়ে বিপুল ঘোষের রাজনৈতিক সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা বারডেমে ছুটে যান এবং বিপুল ঘোষের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা গণমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য অবিলম্বে দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা বিপুল ঘোষকে বিদেশে পাঠানো হোক। এই দাবি আমারও। রাজনৈতিক গুরু বিপুল ঘোষের জন্য ন্যূনতম এই দাবিটুকু না করলে যে বড় অকৃতজ্ঞ কিংবা কৃতঘ্ন হয়ে যেতে হয়!