প্রবীর সিকদার


ঘটনাটি গত বছরের। ঢাকার ইব্রাহিমপুরে নতুন পানির লাইনের কাজ করছিল কয়েক জাপানি নাগরিক। নতুন কাজ চলায় পানি সরবরাহে সমস্যা হচ্ছিল। এ নিয়ে এলাকার কিছু মানুষের সঙ্গে জাপানি কর্মীদের বচসা হয়। সেই বচসা হাতাহাতিতে রূপ নিলে জাপানিরা কাজ বন্ধ করে দেয়। তারা পুলিশে খবর দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমি তখন ইব্রাহিমপুরে এক জরুরি কাজে ছিলাম। স্থানীয়দের দুই একজন আমাকে চিনতেন। গোলমাল নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, এটা ভেবে স্থানীয় এক তরুণ জাপানি নাগরিকসহ সকলকে আমার সামনে ডেকে আনলেন। আমি পুরো মাত্রায় বিব্রত।

দুই পক্ষই ঘটনার পরস্পর বিরোধী বর্ণনা দিলেন। আমি দুই পক্ষকেই শান্ত করে জাপানি নাগরিকদের কাছে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে হাতজোর করে 'স্যরি' বললাম। মুহূর্তে জাপানিদের ক্ষোভ আনন্দে রূপ নিলো; ওরাও হাতজোড় করে স্থানীয়দের কাছে 'স্যরি' বললো ; পরে দুই পক্ষই উল্লাস করতে করতে যে যার কাজে চলে গেল। সেদিন আমি উপলব্ধি করেছিলাম, এক বার 'স্যরি' বলা বা দুঃখ প্রকাশের প্রতি সম্মান দেখিয়ে কতো বড় মহত্বের পরিচয় দিয়েছিল জাপানি কর্মীরা। তাদের কাছে একটি 'স্যরি'র আবেদন কতো গভীর। আর আমাদের কাছে ?

আওয়ামীলীগের তিন নারী নেত্রী অপু উকিল, কোহেলি কুদ্দুস মুক্তি ও সাবিনা আক্তার তুহিন এমপি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা খাদিজাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে সেলফি তুলেছিলেন। সেই ছবি তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছিঃ ছিঃ পড়ে গেল। ওই তিন নারী নেত্রী ঠিক করেছেন, নাকি ভুল করেছেন, তা নিয়ে আমি কথা তুলবো না। কারণ সে সুযোগ আমার নেই। ওই তিন নারী নেত্রীই সেলফি তোলার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। লক্ষ্য করলাম, এই দুঃখ প্রকাশ করাটাকে কেউ পাত্তাই দিচ্ছেন না ; সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ছিঃ ছিঃ চলছেই। দুঃখ হয়, দুঃখ প্রকাশ করবার পরও আমরা জাপানি কর্মীদের মতো মহৎ হতে পারলাম না !

পুনশ্চ : আমি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, আওয়ামীলীগের ওই তিন নারী নেত্রী শুধু খাদিজার সাথে সেলফিই তোলেননি, খাদিজার চিকিৎসার পুরো খোঁজ নিয়েছেন, পরিবারের সদস্যদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে পাশে থাকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। হাসপাতাল থেকে ফিরে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বার্তা পাঠিয়েছেন; এরই এক পর্যায়ে সরকারি তরফে খাদিজার চিকিৎসার পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণের সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়।

(অ/অক্টোবর ০৬, ২০১৬)