সুপ্রিয় সিকদার :


'আমার কোম্পানিতে বেতন বেশি আবার পানিশমেন্টও বেশি। আমি ড্রাইভারদের যেমন সুযোগ দেই আবার অপরাধ প্রমাণিত হলে আমি শাস্তিও দেই। ময়মনসিংহ, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমার ড্রাইভারদের জন্য এপার্টমেন্ট নেয়া আছে, যাতে তারা ট্রিপ শেষ করে খুব সহজেই বিশ্রাম নিতে পারে। তাদের সুবিধার্থে আমি প্রতিটি গাড়ির দুই শিফট করেছি। তাদের মধ্যে ড্রাইভিং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আমি তাদের নিয়ে কাজ করি। ব্রাকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আমি তাদের প্রশিক্ষণ ও ড্রাইভিং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মশালা করাই। প্রতি সপ্তাহে আমি আমার গাড়ির প্রতিটি ড্রাইভার নিয়ে আলোচনায় বসি। ড্রাইভারদের সমস্যা, তাদের গাড়ি চালানো নিয়ে তাদের সাথে কথা বলি। আমি মনে করি আমার গাড়ির প্রতিটি ড্রাইভার মহাখালী বাস টার্মিনালের সেরা ড্রাইভার'।

এভাবেই বাসের ড্রাইভারদের সুযোগ-সুবিধা ও তাদের ড্রাইভিং দক্ষতা নিয়ে কথা বলছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও এনা ট্রান্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের এমডি খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।

শনিবার মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে আয়োজিত ‘চালকদের সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস ও সচেতনতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সড়কে বাসের গতিসীমা বেঁধে দেয়ার লক্ষে সরকারের সঙ্গে কথা চলছে। মৌখিকভাবে সড়কে বাসের গতিসীমা ৮০কিমি/ঘন্টা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। সেজন্য আমার প্রতিটি গাড়িতে আমি গতিসীমা কন্ট্রোল করার জন্য কাজ করেছি। আমার প্রতিটি বাস এখন সড়কে শত চেষ্টা করলেও ৮০কিমি/ঘন্টা গতির বেশি গতিতে চলতে পারে না। কোন উপায়েই সম্ভব না আমার বাসে এই নির্দিষ্ট গতির পরিবর্তন করা। কেননা আমার প্রতিটি গাড়ির গভর্নর সিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, এর ফলে কমে আসবে দ্রুত গতিতে গাড়ী চালানোর প্রবনতা আর কমে আসবে সড়ক দুর্ঘটনা। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আমি ড্রাইভারদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।

এনায়েত উল্যাহ বলেন, সম্প্রতি এনা ট্রান্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড ড্রাইভারদের মধ্যে ৫০ হাজার টাকা করে সঞ্চয় পত্র পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। প্রতি ৬ মাস পর পর ৩ জন ড্রাইভারকে মোট দেড় লাখ টাকার সঞ্চয় পত্র দেয়া হবে। তিনি বলেন, যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা, বেশি গতিতে গাড়ি না চলানো এবং ওভারটেকিং প্রবণতা পুরোপুরি ত্যাগ করে যেসব ড্রাইভারেরা দক্ষতার সাথে গাড়ি চালাবে তাদেরকেই দেয়া হবে এই পুরস্কার।

এনায়েত উল্যাহ আরো বলেন, নিয়ন্ত্রিত গতি, নিরাপদ ভ্রমণ, আরামদায়ক আর স্বস্তির কথা চিন্তা করে এনা ট্রান্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের বহরে সম্প্রতি যোগ হয়ে উন্নতমানের বেশ কিছু বিলাশবহুল গাড়ি। যাত্রিসেবা নিশ্চিতে সম্প্রতি সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এনা ট্রান্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড তৈরি করে সুবিশাল টিকেট কাউন্টার। যাত্রিদের হয়রানি কমাতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে লাইনম্যান।

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আলহাজ্ব সাদেকুর রহমান হীরু, এনা ট্রান্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের জিএম আতিকুর রহমান, এনা ট্রান্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের সকল গাড়ির ড্রাইভার।

মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি হাজী আবুল কালামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় ঢাকা জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আলহাজ্ব সাদেকুর রহমান হীরু বলেন, গাড়ির চালক ও শ্রমিকরা যদি আইন না মেনে চলে তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে এরা যেন দেশের কোথাও গাড়ি চালাতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা হবে। এমনকি বাতিল করা হবে শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যপদও।

এরআগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে আয়োজিত ‘চালকদের সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস ও সচেতনতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী ও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।

(এসএস/অ/অক্টোবর ০৮, ২০১৬)