নিউজ ডেস্ক : সুন্দরবনের রামপালে কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের ‘কনসার্ন নিউইংল্যান্ড বাংলাদেশি আমেরিকানস’ নামের একটি সংগঠনের নেতারা। রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হলে কারিগরি, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত ত্রিমাত্রিক ক্ষতির মুখে পড়বে দেশ। তাই দেশের স্বার্থবিরোধী এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না। স্থানীয় সময় রোববার বিকেলে ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের কামব্রিজের বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড স্কোয়ারে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা বাংলা প্রেস।

কনসার্ন নিউইংল্যান্ড বাংলাদেশি আমেরিকানস- এর নেতা ও নিউ ইংল্যান্ড বিএনপির সভাপতি সৈয়দ বদরে আলম সাইফুলের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এ বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, রামপালের এ চুক্তিটি হয়েছে অত্যন্ত গোপনে। ওই এলাকার জনগণের কোন মতামত নেওয়া হয়নি। তাদের মতামতকে উপেক্ষা করা হয়েছে। সুন্দরবন ধ্বংস করে রামপাল প্রকল্প নির্মাণে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের অনমনীয় ও অযৌক্তিক অবস্থান দুই দেশসহ বিশ্বের সচেতন ও যুক্তিবান মানুষের জন্যই গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন কনসার্ন নিউইংল্যান্ড বাংলাদেশি আমেরিকানসের নেতারা।

সুন্দরবনের অস্তিত্বের জন্য প্রবল হুমকি হিসেবে বিবেচিত মারাত্মক দূষক। এ শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি স্থাপনের এ সর্বনাশা সিদ্ধান্তে দেশবাসীর সাথে আমরাও স্তম্ভিত ও ব্যথিত।

বোষ্টন প্রবাসী কবি ও বিজ্ঞানী ড. সাজেদ কামাল বলেন, সুন্দরবনের বিষয়টি আর কোন দলীয় ব্যাপার নয়, এখন সবার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা সবাই একই বাতাসে নিশ্বাস নেই, একই পানি সাবাই পান করি, একই মাটির উপর সবাই দাড়াঁই এবং একই সুর্য্যের তাপ সবাই গ্রহন করি। রামপালের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের যে ক্ষতি হবে তা সবার জন্যই ক্ষতি হবে। কাউকেই কোন ছাড় দেবে না। বিদ্যুতেরও আমাদের প্রয়োজন রয়েছে। তাই সোনার বাংলা গড়তে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করতে তিনি সরকারে প্রতি আহবান জানান।

সৈয়দ বদরে আলম সাইফুল বলেন, ভারতের তাবেদারি এই আওয়ামীলীগ সরকার রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভুক্তভোগীদের কোনো মতামত নেয়নি। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আমাদের প্রয়োজন, তবে সেটা পরিবেশগত সমীক্ষা করে করতে হবে। বৃহৎ স্বার্থকে ধ্বংস করে পরিবেশের স্বার্থ বিনষ্ট করে কোনো পদক্ষেপ নেয়া মোটেও সমীচীন নয়। তিনি সমাবেশে আগত সকলকে ধন্যবাদ জানান।

নিউ ইংল্যান্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা কাজী নুরুজ্জামান বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের বহু বিকল্প পথ আছে, কিন্তু সুন্দরবনের কোন বিকল্প নেই। এই প্রকল্প শুধু সুন্দরবনকেই ধ্বংস করবে না, এটি জীবন-জীবিকা, পানি সম্পদ ও ঐ অঞ্চলের জনগণের স্বাস্থ্যের যে মাত্রায় ক্ষতি করবে- তা পূরণীয় নয়। সুন্দরবন ধ্বংসের কারণে প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে লাখ লাখ মানুষের জীবন বিপন্ন হবে। আমাদের দেশের ঐতিহ্য রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও সুন্দরবনকে ধ্বংস করে অসম চুক্তির রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রম অচিরেই বন্ধ করতে হবে। তা না হলে প্রবাস থেকে আমাদের এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। নিউ ইংল্যান্ড বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক সোহরাব হোসেন খান বলেন, সুন্দরবনের কোন তুলনা নেই। যেভাবেই হোক দেশের এ জাতীয় সম্পদকে রক্ষা করতেই হবে। এর জন্য দেশের সাধারন মানুষের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকেও সোচ্চার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান অপু বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সুন্দরবন ধ্বংস হবে এটা নিশ্চিত। আর দশ বছর পরে বাংলাদেশি হিসেবে কেউ আমার পরিচিতি জানতে চাইলে তখন আর সুন্দরবন বা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের কথা বলতে পারব না। ততদিনে এটা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। নতুন প্রজন্মের কেউ জানবে না সুন্দরবন নামে একটি বন ছিল বাংলাদেশে। বিক্ষোভ সমাবেশে একটি সিদ্ধান্তপত্র পাঠ করেন রেজাউল করিম।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন শহীদ আহমেদ, রোজী কামাল, বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান অপু ও তানভির নেওয়াজ। এছাড়াও আজাদ খান, বিএনপি নেতা মোয়াজ্জেম কাজী, মাহমুদুর রহমান, আলী হায়দার মনসুর, রোকেয়া জামান এলিজা ও আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এএস/অক্টোবর ১৭, ২০১৬)