সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছ থেকে গত সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া বাংলাদেশের সেই সাত নাবিক দেশে ফিরেছেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইনের ইকে-৫৮২ নং ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌছান তারা।

নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব রিয়াল অ্যাডমিরাল(অব. সমুদ্র সীমা) খুরশিদ আলম বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে তাদের গ্রহণ করেন। এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। বিমানবন্দর থেকে তাদের উত্তরার হোটেল মেরিনোতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে পরিবারের সদস্যদের কাছে তাদের তুলে দেওয়া হয়।
দেশে ফেরা সাত বাংলাদেশি নাবিক হলেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের ভালুকা চাঁদপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফা, হাবিবুর রহমান, নুরুল হক ও আশাশুনি উপজেলার কুল্যা গ্রামের আবুল কাশেম সরকার, চাঁদপুরের লিমন সরকার এবং চট্টগ্রামের আমিনুল ইসলাম ও জাকির হোসাইন।
মেরিটাইম পাইরেসি অ্যান্ড হিউমেনিটারিয়ান রেসপন প্রোগ্রাম’র (এমপিএইচআরপি) রিজিওনাল ডিরেক্টর পিরাজ বারী বলেন, শুক্রবার বিকেল ৫টায় এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হবে। তিনি আরও বলেন, সাড়ে তিন বছর পর বাংলাদেশি, শ্রীলংকান, ভারতীয় ও ইরানি এ নাবিকদের উদ্ধার করা হয়েছে। তারা শারীরিকভাবে অসুস্থ। পরিবারের সঙ্গে দেখা করার জন্য অধীর আগ্রহে রয়েছেন।
তাদের সঙ্গে একই দলে একজন ভারতীয়, দু’জন শ্রীলংকান এবং একজন ইরানি নাবিকও ছিলেন। জলদস্যুদের কাছ থেকে তারাও মুক্তি পেয়েছেন। বিমানবন্দরে সাতক্ষীরার নুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, এখন ভালো আছি। পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে চাই। অনেক কষ্ঠে ছিলাম। নির্যাতিত হয়েছি। দেশে ফিরে আসতে পারায় তিনি সরকার ও জাতিসংঘকে ধন্যবাদ জানান। চাঁদপুরের লিমন সরকার বলেন, মৃত্যুর দরজা থেকে ফিরে এসেছি। আমাদেরকে বহন করা জাহাজ ডুবে গিয়েছিল। পরে দস্যুরা আরেকটি জাহাজে করে অজানা স্থানে নিয়ে যায়। এক টুকরো রুটি খেয়ে বেঁচে ছিলাম। এখন নতুন জীবন পেয়েছি। জাতিসংঘের ‘পলিটিক্যাল অফিস ফর সোমালিয়া’র সহায়তা গত শুক্রবার মুক্তি পান তারা। এরপর শনিবার তাদের বিমানযোগে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে তাদের স¡াস্থ্য পরীক্ষা ও দেখাশোনার জন্য বেশ ক’দিন রেখে দেন নাইরোবির আগা খান হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মুক্তি পাওয়া সাত বাংলাদেশি নাবিকের সবাই সুস্থ আছেন। ২০১০ সালের ২৬ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আলবেদো থেকে সাত বাংলাদেশি নাবিককে অপহরণ করা হয়। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের (ইউএনওডিসি) সহায়তায় সাড়ে তিন বছর পর মুক্তি মেলে এই নাবিকদের। মুক্তির পর জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের (ইউএনওডিসি) একটি উড়োজাহাজযোগে এই সাত নাবিককে নাইরোবিতে নেওয়া হয়। সেখানে ইউএনওডিসি কর্তৃপক্ষ ও নাইরোবিতে বাংলাদেশি দূতাবাস কর্মকর্তারা তাদের গ্রহণ করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ভারত, পাকিস্তান ও ইরানের নাবিকদের সঙ্গে বাংলাদেশের এই সাত নাবিক অপহরণের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্বাবধায়নে তাদের উদ্ধারে কাজ শুরু হয়। এর আগে প্রাথমিকভাবে মেরিটাইম পাইরেসি ও মানবিক রেসপন কর্মসূচি (এমপিএইপআরপি) মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সাত বাংলাদেশি ক্রু জীবিত ছিল বলে নিশ্চিত করে। জানা যায়, জাহাজের মালিক মালয়েশিয়ান হওয়ায় প্রথমে তার কাছ থেকে মুক্তিপণের অর্থ আদায়ের জন্য কূটনৈতিক লবিং চালানো হয়েছে। কিন্তু জাহাজের দামের চেয়ে মুক্তিপণের অর্থ বেশি মনে করে মালিক পালিয়ে যান। নাবিকদের পরিবারের পক্ষ থেকে সোমালিয়ার মুসলমানদের কাছে মানবিক আবেদনও করা হয়। কিন্তু মুক্তিপণ ছাড়া জলদস্যুদের হাত থেকে কারো মুক্তি মেলে না। বিকল্প উপায় না থাকায় তিন বছরের মাথায় মুক্তিপণের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয় সরকার। জলদস্যুদের দাবি করা ছয় লাখ মার্কিন ডলার বা প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ রাষ্ট্রের তিনটি তহবিল থেকে জোগান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেকোন মূল্যে নাবিকদের উদ্ধারের সবুজ সংকেত দেন। তবে মুক্তিপণের টাকা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়াটা আন্তর্জাতিকভাবে স¡ীকৃত না হওয়ায় ভিন্ন চ্যানেলে এর ব্যবস্থার কথা বলেছেন সংশি−ষ্ট কর্মকর্তারা। এ ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিকভাবে সহায়তা করে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক অফিস ইউএনওডিসি ও লন্ডনভিত্তিক মেরিটাইম পাইরেসি অ্যান্ড হিউমেনিটারিয়ান রেসপন প্রোগ্রাম (এমপিএইচআরপি)।সেই ধারাবাহিকতায় মুক্তি পান এই নাবিকরা।

(আরকে/এএস/জুন ১২, ২০১৪)