নিউজ ডেস্ক : ধমনী হচ্ছে মানব দেহের এমনসব রক্তবাহী নালী যা হৃৎপিণ্ড থেকে পরিশোধিত রক্ত বহন করে দেহের বিভিন্ন অংশে সরবরাহ করে। হৃৎপিণ্ডের ধমনী ব্লক হয়ে গেলে (করোনারি আর্টারি ডিজিজ) অর্থাৎ ধমনী দিয়ে বয়ে যাওয়া রক্ত বাঁধাপ্রাপ্ত হলে হার্ট অ্যাটাক ঘটে।

তবে সুখবর হচ্ছে, হার্ট অ্যাটাকের সমস্যা বোধহয় এবার শেষ হতে চললো। কেননা বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম ধমনী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন! যুগান্তকারী এই আবিষ্কারের ফলে হার্ট অ্যাটাকের রোগীদের আর হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি নিয়ে চিন্তিত থাকতে হবে না। কেননা কৃত্রিম ধমনীর মধ্যে দিয়ে কোনো বাধা, বিপত্তি ছাড়াই প্রবাহিত হতে পারবে রক্ত।

এর চেয়েও বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, ছোট টিউবের মতো এই কৃত্রিম ধমনী মানবদেহে স্থাপন করার পর তা বাড়তে থাকবে প্রাকৃতিক নিয়মেই! অর্থাৎ শরীরের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কোষ ও কলাগুলো যখন, যতটা সময়ের সঙ্গে বাড়ে, সেই গতিতেই সেগুলো শরীরের ভেতরে বসানো কৃত্রিম ধমনীকে বাড়িয়ে নিয়ে যেতে পারবে।

আমেরিকার মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বায়োমেডিক্যাল ই়ঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক রবার্ট ট্রাঙ্কুইল্লোর নেতৃত্বে একটি গবেষকদল সম্প্রতি এই কৃত্রিম ধমনী আবিষ্কার করেছেন। যা বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জার্নাল ‘নেচার-কমিউনিকেশন্স’-এ। আলোচিত এই গবেষণাপত্রটির শিরোনাম- ‘টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং অব আসেলুলার ভাসকুলার গ্র্যাফ্টস কেপাব্‌ল অব সোম্যাটিক গ্রোথ ইন ইয়ং ল্যাম্বস’।

বিজ্ঞানীরা পরীক্ষামূলকভাবে তাদের আবিষ্কৃত কৃত্রিম ধমনী ভেড়ার শরীরে বসিয়ে গবেষণায় সফল হয়েছেন। ছোট একটি ভেড়ার শরীরে কৃত্রিম ধমনী বসিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ওই ভেড়ার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার শরীরের কোষ, কলাগুলো যেমন একটু একটু করে বেড়েছে, তেমনি তা ভেড়ার শরীরে বসানো কৃত্রিম ধমনীটিকে একটু একটু করে বাড়িয়েছে। শরীরের ভেতরে বসানো কোনো কৃত্রিম অঙ্গের এভাবে শরীরেই আপনাআপনি বেড়ে ওঠার ঘটনা রীতিমতো বিস্ময়কর।

বিজ্ঞানীরা জানান, শরীরের মধ্যে রক্তস্রোতের জন্য যেন তা ফেটে না যায়, সেজন্য স্বাভাবিক ধমনীর চেয়ে কৃত্রিম ধমনীকে করা হয়েছে দ্বিগুণ শক্তিশালী। মানুষের শরীরে বসিয়ে তার কার্যকারিতা প্রমাণের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও শুরু হবে খুব শিগগিরই।

ভেড়ার ওপর সফল হওয়া কৃত্রিম ধমনী, মানুষের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হওয়ার মতো কোনো বিজ্ঞানসম্মত কারণ নেই বলেই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। ফলে কয়েক বছরের মধ্যেই হয়তো হার্ট অ্যাটাকের রোগীরা নিশ্চিতে সুস্থ থাকতে সক্ষম হবেন বিস্ময়কর কৃত্রিম ধমনীর কল্যানে।

(ওএস/এএস/অক্টোবর ২০, ২০১৬)