সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা শহরের নিরাময় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিষপানে মৃত্যুপথযাত্রী এক স্কুল ছাত্রকে ১৫ ঘণ্টা চিকিৎসা না দিয়ে আটক রেখে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। বৃহষ্পতিবার দুপুর দু’টোয় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা শুরুর আগেই তার মৃত্যু হয়।

মৃতের নাম অভিজিৎ নাম অভিজিৎ বাছাড় (১৪)। সে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গাভা গ্রামের উত্তম বাছাড়ের ছেলে।
গাভা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র সরকার জানান, অভিজিৎ বাছাড়া তার বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। বর্তমানে বিদ্যালয়ে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা চলছে। বুধবার বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীর অংক পরীক্ষা দেওয়ার সময় নকলের অভিযোগে অভিজিতের খাতা কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর সে বাড়ি চলে যায়।
সদর উপজেলার গাভা গ্রামের অশোক কুমার বাছাড় জানান, পরীক্ষায় নকলের ঘটনায় লজ্জিত অভিজিৎ বাড়িতে এসে সকলের অগোচরে বিষপান করে। সন্ধ্যার পর তারা জানতে পেরে স্থানীয় এক ডাক্তারকে খবর দেন। ওই ডাক্তার সদর হাসপাতালে রোগিকে ভর্তি করানোর জন্য গাভা গ্রামের মোজ্জাম্মেল হোসেনের ছেলে সাতক্ষীরা শহরের নিরাময় ক্লিনিকের অংশীদার (দালাল) ফারুখ হোসেনের কাছে এ্যম্বুলেন্স সহযোগিতা চান। ফারুখ এম্বুলেন্স নিয়ে এসে রোগিকে সদর হাসপাতালে না নিয়ে রাত ১০টার দিকে নিরাময় ক্লিণিকে ভর্তি করেন। ক্লিণিকে ভর্তির বিরোধিতা করায় তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
অশোক বাছাড়া আরো জানান, বুধবার রাত ১০টা থেকে বৃহষ্পতিবার বেলা একটা পর্যন্ত কোন ডাক্তার তার ভাইকে দেখতে আসেনি। ক্লিণিকের সার্বক্ষণিক দায়িত্বে থাকা বাবলুর রহমান ওরফে বাবুকে রোগির অবস্থার অবনতির বিষয়টি বারবার বলার পরও চিকিৎসা না দিয়ে আটক রাখায় তিনি বিষয়টি জেলা হিন্দু -বৌদ্ধ খ্রীষ্টা ঐক্য পরিষদের সাবেক সাধারন সম্পাদক গোষ্ট বিহারী ম-লকে জানান।
গোষ্ট বিহারী ম-ল জানান, খবর পেয়ে বৃহষ্পতিবার দুপুর একটার দিকে তিনি নিরাময় ক্লিনিকে যান। বুধবার রাত থেকে এখনো পর্যন্ত ডাক্তার না এলেও এখুনি আসবে বলে তাকে আশ্বস্ত করেন। তিনি রোগী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে তার উদ্দেশ্যে তেড়ে যান বাবলুর রহমান। তার মোবাইল পেয়ে এ প্রতিবেদকসহ কয়েকজন সাংবাদিক নিরাময় ক্লিনিকে গেলে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের নাক- কান -গলা বিশেষজ্ঞ ডাঃ গোলাম সরোয়ারকে মোবাইলে ডেকে আনা হয়। তার কথা মত দুপুর দেড়টার দিকে রোগির স্বজনদের কাছ থেকে ক্লিনিক খরচ বাবদ আট হাজার টাকা আদায় করে ছেড়ে দেওয়া হয়। মুমুর্ষ অবস্থায় সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে দুপুর দুটো ১০ মিনিটে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ ফরহাদ জামাল চিকিৎসা শুরু করার আগেই অভিজিৎ মারা যায়।
গোষ্ট বিহারী মণ্ডল জানান, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বিষপানে মৃতপথযাত্রী রোগিকে চিকিৎসা না দিয়ে টাকার লোভে আটক রেখে মেরে ফেলেছে। তিনি ওই ক্লিনিক বন্ধ ঘোষণা ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ ব্যাপারে নিরাময় ক্লিনিকের অংশীদার মালিক বাবলুর রহমান জানান, অপর অংশীদার ফারুখ হোসেনের কথামত বুধবার রাত ১০ টা থেকে বৃহষ্পতিবার দুপুর একটা পর্যন্ত কোন ডাক্তারকে না পেয়ে নিরুপায় হয়ে ডা. গোলাম সরোয়ারকে ডেকে আনেন। তরে রোগী মারা যাওয়ার অবস্থায় ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, খরচ বাবদ আট হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ এ- হাসাপাতালের নাক -কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম সরোয়ার জানান, তিনি ওই রোগীকে দেখা মাত্রই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে অতি দ্রুত সদর হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. ফরহাদ জামাল জানান, বিষপানকারিকে যথাসময়ে পাকস্থলী ওয়াশ করালে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো যেত।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. সালেহ আহম্মেদ জানান, অভিযোগ পেলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইনামুল হক জানান, ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ধরণের রোগি বেসরকারিভাবে চিকিৎসা দেওয়া বেআইনি। অভিযোগ পেলে নিরাময় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(আরকে/এএস/জুন ১২, ২০১৪)