কবীর চৌধুরী তন্ময় :


শেখ হাসিনা ও সৈয়দ আশরাফ নাম দুটো যেমন বাংলাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় তেমনি এই নামগুলোর মানুষের ব্যক্তিত্ব, বিশ্বাস্থতা, গ্রহণযোগ্যতা, নির্ভরতা-এর কোনওটারই কমতি নেই। তার উপর ইতিহাস-ঐতিহ্যের রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলকে কেন্দ্র করে অদ্বিতীয় শেখ হাসিনা হলেও সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ব্যাপারে নানান জল্পনা-কল্পনা দেখা যাচ্ছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা যেমন রাজনৈতিক শিক্ষা-দীক্ষা, শিল্প-সংস্কৃতিতে বড় হওয়া ও ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে আজ দেশ ও বিশ্বের রোল মডেল। অন্যদিকে জাতীয় চার নেতার ও বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও ছাত্র রাজনীতি থেকে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের দুই-দুইবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে অত্যন্ত দৃঢ়তার সহিত শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়েছে বলে সর্বমহলে প্রতীয়মান।

ইতিহাস বলে, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের হুমায়ুন সাহেবের রোজ গার্ডেনে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ তৎকালীন রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতিতে আত্মপ্রকাশ হওয়া সংগঠনটির যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন কারাবন্দি অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৫২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করার পরের বছর ঢাকার মুকুল প্রেক্ষাগৃহে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ১৩ বছর ধরে যোগ্য নেতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে নিজেকে উচ্চ শিখরে নিয়ে গেছেন শেখ মুজিব।

তখন আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে যাত্রা শুরু করলেও অসাম্প্রদায়িক চেতনা থেকে ১৯৫৫ সালের জাতীয় কাউন্সিল-এ ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে নতুন নামে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ চলতে শুরু করে দলটি। স্বাধীনতার পর আবারও পূর্ব পাকিস্তান শব্দটিকে কেটে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামে আজও বিদ্যমান।

প্রতষ্ঠার পর থেকে রাজনৈতিক সংগ্রাম, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়সহ বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ৫০-এর দশকেই আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম ও প্রধান রাজনৈতিক শক্তি।

১৯৫৭ সালে রাজনৈতিক মতাদর্শ বা মতভিন্নতার কারণে প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি আব্দুল হামিদ খান ভাসানী তখনকার ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ থেকে বেরিয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই রাষ্ট্রভাষা বাংলার স্বীকৃতি, এক ব্যক্তির এক ভোট, গণতন্ত্র, সংবিধান প্রণয়ন, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার, তৎকালীন পাকিস্তানের দু’অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণ এবং প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসনের ওপর বিশেষ গুরুত্বসহ ৪২ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করে এই আওয়ামী লীগ।

১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর কৃষক শ্রমিক পার্টি, পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল ও পাকিস্তান খেলাফত পার্টি এবং ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য অন্যান্য দলকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করতে আওয়ামী মুসলিম লীগ মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

একই বছরের মার্চের ৮ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসন পায়। এরমধ্যে, ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ পেয়েছিল ১৪৩টি আসন।

দীর্ঘ দুই যুগ পাকিস্তান শাসনামলে আওয়ামী মুসলিম লীগ আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে দুই বছর প্রদেশে ক্ষমতাসীন ছিল এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে ১৩ মাস কোয়ালিশন সরকারের অংশীদারও ছিল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় উপযোগী নেতৃত্বে দীর্ঘসময় এই দলটি সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন করে জনগণের মধ্যে আস্থা-নির্ভরতা অর্জন করতে সক্ষম হয় এবং বাঙালির মুক্তির সনদ নামে ১৯৬৬ সালের ছয় দফার ভিত্তিতেই ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে।

পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ শুরু করলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যূদয় ঘটে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের।

নেতা ও ভবিষ্যত নেতৃত্বশূণ্য করার ষড়যন্ত্রে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা এবং ৩ নভেম্বর কারাগারের অভ্যন্তরে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর সামরিক শাসনের নির্যাতন আর নিপীড়নের মধ্যে পড়ে ঐতিহ্যবাহী সংগঠন আওয়ামী লীগ। সময়ের প্রেক্ষাপটে তখন নেতাদের মাঝেও বিভেদ দৃশ্যমান হয়।

১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই আওয়ামী লীগের সম্মেলন-এ তাঁকে দলীয় প্রধান নির্বাচিত করা হয়। ওই বছরের ১৭ মে দেশে ফিরে কয়েকভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করে সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু’র অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে আজও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে দীর্ঘ ২১ বছর পর জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। পাঁচ বছর শাসনের পর ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়ে পরবর্তী রাজনৈতিক সঙ্কটের পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠিত হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুযারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

ষাটের দশকে ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের কর্মী হিসাবে বঙ্গবন্ধু’র কন্যা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবন শুরু। ১৯৬৬-৬৭ সালে ছাত্রলীগ থেকে ইডেন কলেজের ছাত্রী সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন তিঁনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী থাকাকালে ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এবং অন্য রাজনৈতিক জোট ও দলগুলো ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী তীব্র গণআন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে জয়ী হয়। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বেই তৎকালীন বিএনপি সরকারের পতন এবং দলীয় প্রভাবমুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিজয় অর্জন করে আওয়ামী লীগ।

অন্যদিকে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের রাজনীতিতে আসাও কোনো বিস্ময়কর ঘটনা ছিল না। খুব ছোটবেলায় এক আদর্শবাদী পিতাকে দেখে তিনি বড় হয়েছেন। শিখেছেনও হাতে-কলমে। ১৯৫২ সালেন ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’ আন্দোলনে উত্তাল পূর্ব পাকিস্তান। তার বছরখানেক আগে সরকারি চাকরি ছেড়ে সৈয়দ নজরুল ইসলাম যোগ দিয়েছেন অধ্যাপনা পেশায়। শুরু করেছেন ওকালতিও। সর্বদলীয় অ্যাকশন কমিটির সদস্য হিসেবে ভাষা আন্দোলনে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। একই বছর তাঁর ঘর আলোকিত করে জন্মগ্রহণ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

খুব ছোটকাল সৈয়দ আশরাফ দেখেছেন রাজনীতিবিদ পিতার ব্যস্ততা। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম তখন পুরোদমে সক্রিয়। এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতিরও। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরিণত হন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্যতম প্রাণপুরুষে।

সৈয়দ আশরাফ ছোট বেলা থেকেই দেখেছেন রাজনীতির জন্য কিভাবে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। পিতাকে দেখে তিঁনি বুঝেছিলেন সততা আর বিশ্বাস কখনও পরাজিত হয় না। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই রাজনীতিতে অভিষেক হয় সৈয়দ আশরাফের। ছাত্রলীগেই তার রাজনীতির হাতেখড়ি। স্বাধীনতার পর তিঁনি বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

জেলখানায় সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর লন্ডনে চলে যান সৈয়দ আশরাফ। আর সেখানেও আওয়ামী লীগে সক্রিয় ছিলেন তিঁনি। পরে ১৯৯৬ সালে দেশে ফিরে কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর শেখ হাসিনার ওই সরকারে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী হন শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

তিঁনি পুনরায় ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী ২০১৪ সালে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পরও দলে নিজের সবচেয়ে বিশ্বস্থ হিসেবে পরিচিত আশরাফকে সরকারের একই দায়িত্ব দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার বন্দি হওয়া এবং প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার উল্টোযাত্রা ও দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের কারাবন্দির মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে বর্ষিয়ান নেতা তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমানের পাশে থেকে সহযোগিতা করেন এবং শক্ত অবস্থান নিয়ে দলের ভেতরের ও বাইরে সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন। বিরূপ পরিস্থিতি সামাল ও দলের ক্রান্তিকালে অসাধারণ রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে দলীয় সভানেত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পূর্ণ আস্থা অর্জন করেন সৈয়দ আশরাফ।
২০০৯ সালের ২৪ জুলাইয়ের জাতীয় কাউন্সিল-এ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রথম এবং ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তিঁনি দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

দেশে বিডিআর বিদ্রোহ, হেফাজতে ইসলামের উত্থান-বর্বরতা সামাল দেওয়া এবং বিএনপিকে বাদ দিয়েই নির্বাচন করে ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার ক্ষেত্রে আশরাফের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা শুধু আওয়ামী লীগেই আলোচিত নয়, গোটা রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজের মেধা, প্রজ্ঞা আর বিচক্ষনতায় উচ্চ শিখরে নিয়ে গেছেন নিজেকে।

২০১৬ সালের ৯ জুলাই দলের এই সাধারণ সম্পাদককে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সুচনা হয়।
এরপর নানা গুঞ্জনের মধ্যে গত ১৩ জুলাই দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্তে কথা বলার পর লন্ডন যাত্রা বাতিল করে এবং তার দুদিনের মধ্যে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে জনপ্রশাসন করার পর সৈয়দ আশরাফকেই এই দপ্তরের প্রথম পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে নাম ঘোষণা করেন।

“আমার তো ৩৫ বছর হয়ে গেছে। আমাকে যদি রিটায়ার করার সুযোগ দেয় তাহলে আমি সব থেকে বেশি খুশি হব।” যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফরের অভিজ্ঞতা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার সময় সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ ও সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধু’র কন্যা শেখ হাসিনার এমন মন্তব্যে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা সমস্বরে ‘না না’ বলে ওঠার মাধ্যমে আবারও প্রমাণীত আওয়ামী লীগের জন্য শেখ হাসিনা এখনও অদ্বিতীয় এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সর্বত্রই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু সাধারণ সম্পাদক পদটি। এ পদে কে বসছেন তা নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক-গবেষক, সাংবাদিক-সংবাদ মাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা। ইতোমধ্যেইে অদ্বিতীয় ও সময়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতা-নেতৃত্ব হিসেবে শেখ হাসিনাকে সভাপতি মেনে-বিশ্বাস করেই এখন দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদটি নিয়ে হিসেব-নিকেশের অন্ত নেই।

আওয়ামী লীগের আসন্ন জাতীয় সম্মেলন শুধু সম্মেলনের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিৎ হবে না। নেতা, নেতৃত্ব এবং আগামীর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ ও মোকাবেলায় দক্ষ, নির্ভরতা ও আস্থার জায়গা সুনিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরী। ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে ‘সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির’ বৈঠকে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব আসবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন।

অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারকাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, বঙ্গবন্ধু’র বাকী খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা, জামায়াত ইসলামের রাজনীতি নিষিদ্ধ ও তাদের অর্থের উৎস বন্ধ-বাজেয়াপ্ত করা, ধর্মীয় সম্প্রীতি, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মানুষ-মানবতাবোধ, সামাজিক অবক্ষয়রোধসহ শেখ হাসিনার অর্জন ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের পজেটিভ ভাবমূর্তিকে আরও ত্বরান্বিত করতে হলে এই সম্মেলনের মাধ্যমেই কিছু মেধা-সভ্যতার আধলের নেতৃত্বের নেতাকে বের করে আনা অতি জরুরি।

আর আওয়ামী লীগকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে গেলে যেসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে এর জন্যে শেখ হাসিনার পাশে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মতো নেতার বেশি প্রয়োজন বলে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্যতা প্রতীয়মান। ইতোপূর্বে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সৈয়দ আশরাফ শেখ হাসিনাসহ দলীয় নেতাকর্মী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক-গবেষক ও রাজনৈতিক নেতাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছেন। যদিও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাংগঠনিক কাজে দলের অনেক নেতা ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করার সুযোগ পেলেও দলের কঠিন সময়ে শেখ হাসিনার পাশে থেকে আশরাফের ভূমিকার কথা একবাক্যে সবাই স্বীকার করবে বলে আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতার বিশ্বাস।

দল ও সরকারের অতিসংকটময় মুহূর্তে সৈয়দ আশরাফের উপর দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়াই নির্ভর করা যায়, আস্থার বিশ্বাস স্থাপন করা যায় যা একাধিকবার তার প্রমাণও পেয়েছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট ফোরাম (বোয়াফ)