সঙ্গীতা ইমাম


আবার শুরু হলো মন্দিরে হামলা, নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের উপর হামলা। কি সব উদ্দেশ্য প্রণোদিত হাস্যোকর ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ধ্বংসযজ্ঞ! এসব কি কোন সুস্থ মানুষের কাজ?

কবে আমরা একটু সচেতন হবো? কবে চিলে কান নিয়েছে বলে চিলের পিছনে না দৌড়ে যৌক্তিক চিন্তা করবো বা কানে হাত দিয়ে দেখবো তা আসলেই খোয়া গেল কি না ?

গতকাল ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর জন্মভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে মন্দির, প্রতিমা ভাঙচুর ও কয়েকটি ঘর বাড়ি ভেঙে তছনছ করা হয়।আজ সুনামগঞ্জে মন্দিরে হামলা। আজ রাজবাড়িতে এক শিক্ষকের বাড়ি ভাঙচুর করেছে দুষ্কৃতিকারীরা। এরা নিশ্চয়ই কারো ভাই বা ছেলে এদের প্রতিক্রিয়াশীলরা মগজ ধোলাই করলো? আমরা কেন আমাদের সৎ উদ্যোগের প্রতি আকৃষ্ট করতে পারছি না সাধারণ মানুষকে? কেন বোঝাতে পারছি না দেশ কারো একার নয় আমাদের সবার।সবার এ দেশে আমরা সবাই প্রাণ খুলে বাঁচবো। হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান সকলেই এক বাতাসে শ্বাস নেবো এ জন্মভূমিতে।

যে মানুষগুলো বছর, দশক,যুগ ধরে পাশাপাশি আত্মীয়তার বাঁধনে বাঁধা ছিল, কোন যাদুটোনার মাধ্যমে তাদের মধ্যে এমন বিভেদ তৈরি করা হলো যাতে আত্মীয়তা তো দুরস্ত একেবারে মেরে তাড়ানোর ব্রত নিয়ে নিলেন একদল! যাদের মাথা একটু যৌক্তিক চিন্তা করে দেখেন না অস্ত্রের আঘাত করার আগে? বাঙালির যে অসাম্প্রদায়িকতার ঐতিহ্য তা এভাবে মিথ্যা হয়ে যাবে! হারিয়ে যাবে?মুক্তিযুদ্ধের সময় এই ভাইবোনদের আমাদেরই পূর্বসূরিরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগলে রেখেছিলেন।আমরা আগলানো তো দূরের কথা উল্টো রক্তাক্ত করছি। কবে সাধারণ মানুষের বোধোদয় হবে? কবে ভাইয়ে ভাইয়ে বিবাদ লাগানোর অপশক্তিতে আমরা চিনতে পারবো? কবে তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে পারবো? সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে বন্ধ হবে হানাহানি? হিন্দু মুসলমান নয় মানুষের আবাসভূমি হবে এই বাংলাদেশ। ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের কড়াল গ্রাস থেকে মুক্ত হবে প্রিয় স্বদেশ।পত্রিকার পাতা জুড়ে থাকবে না ধ্বংসের তান্ডবের নৃশংসতার চিত্র । রাম, রহিম,রবার্ট, একই দেশমাতৃকার সন্তান বলে পরিচিত হবে। সেদিন আর কত দূরে?

লেখক : শিক্ষা ও সংস্কৃতি কর্মী।