গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু


অনেক কষ্টে গত দুদিন ঘটনাটা কারও সঙ্গে শেয়ার করিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অপমান সইতে না পেরে ফেসবুক বন্ধুদের বিষয়টি শেয়ার করে জানাতে বাধ্য হচ্ছি। এজন্য ক্ষমাপ্রার্থী।

বন্ধুরা, গত তিনদিন আগে ফেসবুকে একটি বিতর্কিত ছবি আপলোডকে কেন্দ্র করে নাসিরনগরে যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে, সেটি আমরা সবাই অবগত আছি। কিন্তু ওই অনাকাংখিত ঘটনার রেশ পার্শ্ববর্তী মাধবপুর উপজেলায়ও ছড়িয়ে পড়ায় আমরা একটু চিন্তিত হয়ে পড়ি।

এরপর বিষয়টি নিয়ে ওইদিনই ফেসবুকে নানাজনের নানা কুৎসিত মন্তব্য ছড়িয়ে পড়তে দেখে আরো বিচলিত হয়ে পড়ি।

অসাম্প্রদায়িক চেতনার অনুসরণীয় স্থান আমার এই পূণ্যভূমি নবীনগর উপজেলায় যেন কোনভাবেই এর কোন নেতিবাচক প্রভাব ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য একটু সতর্ক ও প্রয়োজনীয় আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নবীনগর উপজেলা প্রশাসনের এক উর্ধতন কর্মকর্তাকে ফোন দেই। কিন্তু তিনি ফোন ধরেন নি। পরে তাঁর ইনবক্সে একটি ম্যাসেজে এ বিষয়ে আগাম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরর জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ করি।

অতীব দু:খ ও কষ্টের সঙ্গে বন্ধুদের জানাচ্ছি, ওই উর্ধতন কর্মকর্তা আমাকে ফিরতি একটি ম্যাসেজে আমাকে উদ্দ্যেশ্য করে আমার ইনবক্সে লিখেন,

'নিজেদের লোকদেরকে আগে সাবধান করুন। তাদেরকে উস্কানী পরিহার করতে বলুন। নিজেরা সতর্ক থাকুন। প্রশাসন সতর্ক আছে...।' তার ওই ম্যাসেজে এটা স্পষ্ট যে, তিনি 'তাদেরকে' বলতে হিন্দুদেরই বুঝিয়েছেন।

এ ম্যাসেজ পড়ার পর কয়েক মিনিট আমি নির্বাক হয়ে থাকি। এ তিনি কি লিখলেন! এই তাঁর মানসিকতা! এই তাঁর অসাম্প্রদায়িক চেতনার নমুনা!

দীর্ঘক্ষণ ধরে ভাবি, আমাদের শেষ ভরসা ও আস্থার প্রতীক বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই মনোভাবাপন্ন, এমন চরম সাম্প্রদায়িক প্রশাসন দিয়ে কিভাবে আমাদেরকে রক্ষা করবেন...? এঁরাতো আমাদেরকে রক্ষার বদলে দেশ ছাড়া করে ছাড়বে!

পরক্ষণেই নবীনগর থানার দুই ওসি মহোদয়কে বিষয়টি নিয়ে যাতে কেউ নবীনগরে কোনভাবেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার না করতে পারে সেজন্য আগাম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করি। আমি কৃতজ্ঞ দুই ওসি মহোদয়ের কাছে। তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে আমাকে পরক্ষণেই অবগত করে বিষয়টি তাঁদের অবগত করায় আমাকে ধন্যবাদও দেন। সেজন্য আমরা পুলিশের এই দুই কর্মকর্তার কাছেই চিরকৃতজ্ঞ।
অথচ আরেকজন আমাকে ম্যাসেজ দিয়ে আমাদের হিন্দুদেরকেই সাবধান থাকতে পরামর্শ দিলেন, আর উপদেশ দিলেন হিন্দুরা যেন উস্কানী পরিহার করে...নিজেরা সতর্ক থাকে।

বন্ধুরা, ঢাকার দুজন প্রথিতযশা আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন সাংবাদিককে গতরাতে বিষয়টি অবগত করলে, তাঁরা বিষয়টি জেলা প্রশাসনসহ মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে লিখিতভাবে জানানোর জন্য আমাকে পরামর্শ দিলেন।

কিন্তু বন্ধুরা, না, আমি কোথাও যাবনা। আমি সবচেয়ে শক্তিশালী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এই ফেসবুকের মাধ্যমেই অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে আমাদের মূল অভিভাবক মাননীয় সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদল ও আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার কাছেই এর প্রতিকার প্রার্থনা করলাম। জয় বাংলা।

[লেখাটি ফেসবুক থেকে সংগৃহীত]

লেখক : সংবাদকর্মী।