হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : হালুয়াঘাটে ৩ নভেম্বর ঐতিহাসিক তেলিখালী দিবস/২০১৬ উদযাপিত হয়েছে। জেলার সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট গারো পাহাড়ের পাদদেশে ঘেরা সবুজ-শ্যামল ছায়া দ্বারা পরিবেষ্টিত যার পাশে রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্য। জানা যায়, প্রায় ৪৫ বছর পূবে ঐতিহাসিক তেলিখালী প্রান্তর যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়ে উঠেছিল। বাংলার সাহসী দামাল ছেলেরা তৎকালীন সময়ে জীবন কে বাজি রেখে মরণপণ সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জয় করেছিল ঐতিহাসিক তেলিখালী।

সেদিন পতন হয়েছিল পাকহানাদার বাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি। বিজয়ের মাধ্যমে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ের পথ সূচিত হয়েছিল। আর এ অগ্রযাত্রায় বুকের তাঁজা রক্ত দিয়ে আত্মত্যাগ করেছিলো মুক্তিযোদ্ধা সহ অন্যান্য বাহিনীর গর্বিত সন্তানরা। সেদিন ২ প্লাটুন পাক হানাদার বাহিনী ধ্বংস হয়েছিল। ৭১’র ৩ নভেম্বর তেলিখালী সীমান্ত এলাকায় হানাদার বাহিনীর শক্তিশালী দুর্গ সেদিন ভয়ংকর মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছিল। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা সাব-সেক্টরের বিপরীতে তেলিখালীর তদানীন্তন ই পি আর ক্যাম্পে পাক বাহিনীর ৩৩ পাঞ্জাব রেজিঃমেন্টের ২ প্লাটুন সেনা, ভারী অস্ত্র ও ১ প্লাটুন রাজাকার-আলবদর বাহিনী মোতায়েন করে শক্তিশালী ঘাটি গড়েছিল।

মুক্তিবাহিনীর অভিযানের সামনে এটিই ছিল একমাত্র বাঁধা। বাধা ডিঙিয়ে সিদ্ধান্ত হয় পাক হানাদার বাহিনীর তেলিখালী ক্যাম্প দখল করা। আর সেই ঐতিহাসিক তেলিখালী রণাঙ্গনে শহীদ হয়েছিল ৭ বীরমুক্তিযোদ্ধা। এরা হলেন সরিষাবাড়ির শওকত আলী,হালুয়াঘাটের মোঃ আক্তার হোসেন, ফুলপুরের মোঃ হযরত আলী, ময়মনসিংহ সদরের মোঃ আলাউদ্দিন, মোঃ শাহজাহান, শ্রী রঞ্জিত গুপ্ত, নোয়াখালীর সিপাহি মোঃ ওয়াজি উল্লাহ সহ নাম না জানা আরো অনেকেই।

তাই প্রতি বৎসরের ন্যয় দিনটিকে স্মরণীয় রাখার জন্যে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করেছে উপজেলা প্রশাসন। আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক তেলিখালী দিবস উদযাপন করা হয়। ঐতিহাসিক তেলিখালী যুদ্ধে বীর শহীদদের কবর জিয়ারত, দোয়া মাহফিল ও কাঙ্গালীভোজ সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ হেলালুজ্জামান সরকারের সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মোঃ খলিলুর রহমান ও উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মি. জুয়েল আরেং।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর), এস.এ নিয়াজী, পিপিএম, উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ খান, আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন, কমান্ডার, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধ সংসদ, ময়মনসিংহ মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ড, এম সুরুজ মিয়া, চেয়ারম্যান, ১নং ভূবনকুড়া ইউনিয়ন পরিষদ। উক্ত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা ও প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কবিরুল ইসলাম বেগ, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, উপজেলা আওয়ামীলীগ। এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন উপাধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ, যুগ্ম সম্পাদক, উপজেলা আওয়ামীলীগ, কামরুল ইসলাম মিঞা, অফিসার ইনচার্জ, শহীদ পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, সাংবাদিক, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, উপজেলা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন ।

(জেসিজি/এএস/নভেম্বর ০৪, ২০১৬)