ফরিদপুর প্রতিনিধি : দু'দিন আগেও ছিলেন ঢাকার ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের বিছানায়। আজ তিনিই ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট ১ নম্বর সড়কের বাসায় খানিকটা ব্যস্ত জীবন কাটাচ্ছেন। একের পর এক মোবাইল ফোন বাজছে, তিনি কথা বলছেন মোবাইল ফোনের অপর প্রান্তের আত্মীয় কিংবা শুভাকাঙ্ক্ষী কিংবা দলীয় কর্মীর সঙ্গে। দলের নেতা-কর্মী, আত্মীয়- স্বজন, প্রতিবেশী বন্ধুরা বাসায় আসছেন, কথা বলছেন তাঁদের সঙ্গে; চলছে কুশলাদি বিনিময়। স্বভাবজাত ভঙ্গিমায় স্ত্রী স্মৃতি কণাকে বলছেন, ওদের চা দাও, ওদের ফল দাও, ওদের সরবত করে দাও, ওদের পানি দাও... আরও কতো কী!

কতোদিন গোয়ালচামটের বাসায় এই প্রাণ ছিল না। স্মৃতি কণাও হাসিমুখে স্বামীর নির্দেশনা পালন করে যাচ্ছেন একের পর এক। বাসায় শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভিড় একটু কমলেই সোফায় বসে চোখের সামনে মেলে ধরছেন দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, সমকাল, বাংলাদেশ প্রতিদিন, আমাদের সময়। চোখ রাখছেন অনলাইন পত্রিকা গুলোতেও। রাজনীতির খবরেই চোখ রাখছেন বেশি।সুযোগ পেলেই নেতাকর্মীদের সাথেও কথা বলছেন রাজনীতি নিয়েই ; যেন জনতার কাতারে আবার ফিরে এসেছেন এক জননেতা। তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা বিপুল ঘোষ । দীর্ঘ অসুস্থতা ও ঢাকার ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে টানা এক মাসের চিকিৎসা শেষে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে ফরিদপুরের বাসায় ফিরেছেন তিনি। ওইদিন বিকেলেই বিপুল ঘোষ ইব্রাহিম কার্ডিয়াক থেকে ছাড়া পান।

বিপুল ঘোষের ভাতিজি এডভোকেট ছন্দা ঘোষ, যিনি ঢাকায় তার কাকার পাশে ছিলেন, তিনি আজ বিকেলে বলেন, তার কাকু এখন দারুণ হাসিখুশি। দারুণ স্মার্টও লাগছে তাঁকে। অনেকদিন তারা তার কাকুকে এমন হাসিখুশি দেখেননি।বিপুল ঘোষের দারুণ ভক্ত অরুণ মণ্ডল, দিন রাত হাসপাতালে তাঁর সেবা করেছেন, তিনি চোখ ভিজিয়ে বলেন, আবার তাঁর মুখে আমাদের মুখে হাসি ফুটেছে, এর চেয়ে বড় স্বস্তি আর নেই! বিপুল ঘোষের স্ত্রী স্মৃতি কণা ঘোষ বলেন, অনেক দিন পর তাঁদের বাসায় প্রাণ ফিরে এসেছে। তিনি তাঁর স্বামীর সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে আসায় সৃষ্টিকর্তা ও দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আশা প্রকাশ করে বলেন, রাজনীতির মানুষ আবার ফিরবেন রাজনীতিতেই।

উল্লেখ্য, ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতা বিপুল ঘোষ দীর্ঘদিন জটিল হৃদরোগে ভুগছিলেন। গত ৩ অক্টোবর তিনি ঢাকার ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রফেসর ডা. মাসুম সিরাজ প্রথমে ৫ অক্টোবর তাঁর হৃদপিণ্ডে ভাল্ব প্রতিস্থাপন করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু বিপুল ঘোষের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ৫ অক্টোবর ভাল্ব প্রতিস্থাপন করা যায়নি। পরীক্ষা নিরীক্ষা ও চিকিৎসার পর ১৫ অক্টোবর শনিবার দুপুরে হৃদপিণ্ডে অপারেশনের মাধ্যমে ভাল্ব প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। বিপুল ঘোষের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১৫ অক্টোবরও তাঁর হৃদপিণ্ডে অপারেশন করা যায়নি। পরে ১৮ অক্টোবর বিপুল ঘোষের হৃদপিণ্ডে সফলভাবে ভাল্ব প্রতিস্থাপন করা হয়। পরে তাকে ওই হাসপাতালেরই আইসিইউতে রাখা হয়। তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় গত ৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। একমাস পর রুটিন চেকআপের জন্য তাঁকে আবার ইব্রাহিম কার্ডিয়াকে যেতে হবে।

(পিএস/এএস/নভেম্বর ০৫, ২০১৬)