দেবজ্যোতি কাজল


মাতৃভূমি শব্দটা মাঝে মাঝে ধর্মের চাপে পড়ে প্রাণ বাঁচাতে চিৎকার দেয় । এটাই স্বাভাবিক যে, যে যে-দেশে জন্মগ্রহন করে তাঁর দেশ সেইটা। সেইটাই তাঁর মাতৃভূমি। কিন্তু কখন-সখন এই সত্যটাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাস । ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙা নিয়ে করসেবকদের আন্দোলন চলছে। মিডিয়ার সুবাদে শোনা গেল বাবরি মসজিদ হামলা হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশে বাবরি মসজিদকে কেন্দ্র করে সারা বাংলাদেশ উত্তাল। বাংলাদেশের অমুসলিমদের (হিন্দু) উপর বয়ে চলছে সাম্প্রদায়িক ঝড়। সেই ঝড়ে কয়েক লক্ষ মানুষ রাতের আঁধারে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যায়। কেউবা রাতের আঁধারে সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হন, কেউবা হোন পুলিশের উপস্থিতিতে নির্যাতন। হাজার হাজার হিন্দু বাড়ি ও মন্দির ভাঙা হয় । ভোলাতে কি হয়েছে নতুন করে আর লিখলাম না। সেখানকার হিন্দুরা ধূতি পরা ভুলে গিয়েছিল । বিবাহিত মহিলারা শাঁখা-সিঁদুর পরতে সাহস পেত না। কি নির্মম সে সব দিন ভুলা যায় না।

যারা কোন ভাবেই এই বাবরি মসজিদ ভাঙার সাথে যুক্ত না থেকেও চরম খেসারত সেদিন দিতে হয়েছিল। তারপরও আজ অবধি বহু সাম্প্রদায়িক ঘটনার সঙে বিডি হিন্দুরা বিভীষিকা দেখে আসছেন। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ঘটণায় আরও এক পর্ব বাংলাদেশের ইতিহাসে যুক্ত হল। প্রতিমা ভাঙা, মন্দির ভাঙা, ঘর বাড়িতে আগুন দেওয়া, ভিটা জমি দখল করা এসব নিত্য দিনের ঘটনা হিন্দুদের জীবনে।

তবুও জন্মভূমিকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ তো সত্য টিকে থাকা মানেই যে বেঁচে থাকা তা নয় । কিন্তু কি এমন ঘটনা ঘটল যা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের সমস্ত হিন্দুকে তার খেসারত দিতে হলো । ভাঙা হলো ৩০০ ঘর-বাড়ি , ১৫-এর অধিক প্রতিমাসহ মন্দির, ৬টি ভিটা বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হলো। দোষ যদি করে থাকে তা রসরাজ করেছে। যদিও এখন তার অনেক ভার্সন শোনা যাচ্ছে। সবচে বড় কথা রসরাজকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিলেন । তা সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্তের ব্যপার । যদিও এটা আশা করা যায় না । বাংলাদেশে এমন কোন নজির নেই যে কোন হিন্দু সাম্প্রদায়িক হামলার সঠিক বিচার পেয়েছেন। না পেয়েছেন মন্দির প্রতিমা ভাঙার বিচার ,না পেয়েছেন ভিটা বাড়ি দখল চলে যাওয়ার বিচার। এই ভাবেই বেঁচে আছেন ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু জাতি ।

যাই হোক , যে কথা বলে বলব বলে কলম ধরা । ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাসিরনগরে এতবড় ঘটনা ঘটে যাওয়া সত্ত্বেও আজ কিন্তু সারা ভারতে শান্তি বিরাজ করছে । কোথাও কোন সাম্প্রদায়িক উসকানি নেই । একটা রাষ্ট্রের ও জনগণের চিন্তাচেতনা এমটাই হওয়া উচিৎ । কিন্তু বাংলাদেশের কিছু মুসলিম এ যুক্তিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বারবার সমষ্টিগত আক্রমণে লিপ্ত হয়েছেন । মাশুল দিতে হয়েছে একের জন্য বহুজনকে ।

একথা সত্য ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ কোন সীমারেখা মানে না । বিজ্ঞান মানুষকে ভাবাচ্ছে মঙ্গল গ্রহে বসবাস করার । হয়তো একদিন তা হবেও । এমন কখনই ভাবনা মঙ্গলে কিছু ঘটলে তার খেসারত পৃথিবীকে দিতে হবে । ভাবতে হবে ধর্মীয় মেরু করণে জন্মভূমির অধিকারে যেনো আঘাত না লাগে ।