’পাবার মতো চাইলে পাওয়া যায়‘


“এখানে বসতে পারি?”
“জ্বি-না, লোক আছে।”
মৃদু কণ্ঠস্বর কানে এলো, দাঁড়িয়ে থাকলাম । ট্রেনে প্রচন্ড ভিড়। আশে-পাশে সিট খালি নেই। কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস। টিকিটে সিট নম্বর থাকে, কাউন্টার থেকে টিকিট নিতে পারিনি। আজ বোধ হয় জরিমানা দিতে হবে! মনে এক প্রকার ভয় কাজ করছে। আশে-পাশে অনেকেই বসে আছে । ট্রেন এক স্টেশন অতিক্রম করছে। এখনও ভদ্রমহিলার পাশের সিট খালি। লোক আছে বলল, অথচ কেউ বসছে না।

“বই নেবেন, বই।”
এক ফেলিওয়ালাকে বই বিক্রি করতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, জীবনানন্দ দাশের কবিতার বই আছে?”

“না ভাই। রবিঠাকুর, মধুসূদন, নজরুল ইসলামের বই আছে।” বলে, বই ফেরিওয়ালা আমার দিকে তাকাল।
আমি বললাম, “না-লাগবে না।”

বলতেই ফেরিওয়ালা চলে গেল । আমি দাঁড়িয়ে থেকেই খোলা জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগলাম। মাঝে-মধ্যে সামনে বসে থাকা মেয়েটির দিকেও নজর পড়ছে। প্রকৃতির দৃশ্য আর মেয়েটি যেন একাকার হয়ে যাচ্ছে । আমার জীবনে এই প্রথম লুকিয়ে কোন মেয়ের মুখের দিকে বারবার তাকানো। ট্রেন ছেড়েছে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে, এখন সকাল ১০টা ৫ মিনিট । পঁয়ত্রিশ মিনিট দাঁড়িয়ে আছি। আর এই পঁয়ত্রিশ মিনিটের মধ্যে বসে থাকা মেয়েটির দিকে বেশ কয়েক বার তাকিয়েছি। নিশ্চয় কী যেন আছে মেয়েটির চেহারায়!

“শ্রাবস্তী, এই শ্রাবস্তী, আমি এখানে । দরকার হলে ডেকো।”
এক পুরুষ কণ্ঠস্বর কানে এলো। পেছন ঘুরে থাকায় দেখা হলো না লোকটিকে। সামনে বসা মেয়েটি ঘাড় নাড়িয়ে লোকটির কথাইে সায় দিলো।

মেয়েটির নাম হয়তো শ্রাবস্তী। জীবনানন্দ দাশের এক কবিতায় এই শ্রাবস্তীর শব্দের উল্লেখ আছে। প্রথমে সংগ্রহে থাকা বেশ কয়েকটা বাংলা অভিধানে খুঁজেও শ্রাবস্তী শব্দের অর্থ খুঁজে পাইনি। না পাওয়ার ভিতর দুর্লভ আকাঙ্ক্ষা থাকে বোধ হয়! অবশেষে এক বইতে শ্রাবস্তী শব্দের অর্থ খুঁজে পেয়েছি। তখন মনে হয়েছে আমি বিশ্ব জয় করেছি। আর এই মেয়েটির নামও শ্রাবস্তী এবং আমার সামনে বসে আছে । ব্যাপারটি ভাবতে খুবই ভাল লাগছে।

এই পৃথিবীতে মানুষ জন্ম নেবার পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে শিক্ষিত-অাশক্ষিত, অথবা যে রুচিরই মানুষ হোক, সে যা চিন্তা করে, মনে মনে কল্পনা করে, আর তাই যদি তার জীবনে ঘটে যায়, তাহলে কেমন হতো পৃথিবীর পরিবেশ! ঘটে যাওয়া ঘটনার পান্ডুলিপির লেখক- হয়তো তা হতে দেবে না। প্রকৃতি শুধু স্বাধীনতা দিয়েছে যেমন ইচ্ছে ভাবতে , স্বপ্নের জগতে নিজেকে জয়ী করতে। আমি কি দার্শনিক হয়ে যাচ্ছি?

চলবে...