পাবার মতো চাইলে পাওয়া যায়


“কোথায় যাবেন?”
মৃদু স্বরে শ্রাবস্তী মায়াবী চাহনিতে নৃত্য করা চুলগুলোকে সংযত করতে করতে বললে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “আমাকে বলছেন?”
“হ্যাঁ।”
“রাজশাহীতে।”
“বসবেন এখানে?”
নির্লজ্জের মত রাজি হতে গেলাম না। বললাম না-না থাক, দাঁড়িয়েই ভাল আছি।
“অনেক পথ তো, কতক্ষণ আর দাঁড়িয়ে থাকবেন! বসুন।”
শ্রাবস্তী নিজে একটু সরে আমাকে বসার জায়গা করে দিলো। নিজের কাছে একটু ভাল লাগলো। শ্রাবস্তী যখন নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছিল, তখন আমি ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আসলে নামের সাথে চেহারার অদ্ভুত মিল আর ‘শ্রাবস্তী’-র চেয়ে মাধুর্যমন্ডিত যদি কোন নাম থাকে , তবে হয়তো এই মেয়েটিকে সেই নামে ডাকা যায়।

কেন যেন মনে হচ্ছে মেয়েটি অনেক গুণের অধিকারিণী। তাছাড়া আমি অপরিচিত। আমার সাথে যেভাবে আপন জনের মত কথা বলল, হয়তো মেয়েটির মনে কোন জড়তা নেই। যাদের মন নির্মল, তারা অনেক কিছু করতে পারে । তবে কি এই মেয়েটি নির্মল মনের অধিকারিণী? তাছাড়া আমিই বা এত কিছু ভাবছি কেন ওর সম্বন্ধে?
“কী হলো, বসেন।”

ব্যাগটা বাংকারে রেখে আমি বসে পড়লাম শ্রাবস্তীর পাশে। আশে পাশের সবায় এক নজর তাকাল। শ্রাবস্তীর শব্দহীন হাসিতে আনন্দ দোল দিয়ে উঠলো মনের ভেতর। এর আগে বাসে-ট্রেনে যাতায়াত করেছি , কিন্তু আজ যা ঘটলো তা কোন দিন ঘটেনি।

চুপচাপ বসে আছি। শ্রাবস্তীও আর কথা বলছে না, জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছে।
আমি দাঁড়িয়েছিলাম বলে ও হয়তো ভদ্রতা বশত আমাকে বসতে বলেছে। কোথায় যাব জিজ্ঞেস করেছে। এই অল্প সময়ে শ্রাবস্তীর সম্মন্ধে ভাল ধারণা তৈরি হয়েছে আমার । আমার সম্মন্ধে কী ভাবছে শ্রাবস্তী ? আমি যে ওর প্রতি পদক্ষেপগুলো নিয়ে ভাবছি, ও কি তা বুঝতে পারছে? না কি আমাকে আকর্ষণ করার জন্য এত সব করছে! মনের ভিতর কৌত’হল জাগছে।

শ্রাবস্তী ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে ছোট একটি নোট বুক বের করে কী যেন দেখছে। ও-কি আমাকে দেখানোর জন্য নোট বুকটা বের করলো? আমি মাঝে-মধ্যেই শ্রাবস্তীর দিকে তাকাচ্ছি। শ্রাবস্তী যা করছে হয়তো কোন সুন্দরী মেয়ে কোন পুরুষের সাথে এরূপ করলে, তারাও কি আমার মত করে পাশে বসে থাকা মেয়েটির দিকে তাকাবে ?

হঠাৎ ট্রেনের গতি ধীর হয়ে এলো। ট্রেন কি এখানে দাঁড়াবে? কৌতুহলী হয়ে শ্রাবস্তীকে “একটু দেখি” বলে ওর উপর ঝুঁকে জানালায় মুখ বাড়ালাম। শরীরের ভিতর....
(চলবে)