কালোচুলের নদী
..................................

নদীপ্রান্তে একা নির্বাসিত হয়ে বসে আছে সমূহ বেদনাবৃন্তান্ত
এদিকে সন্ধ্যা নামছে তোমার দীর্ঘ-কালোচুলের নদীতে
বাসনাসূত্রে নদী আর কালোচুলের বেণীবন্ধন ঘটুক...

স্বপ্ন বার বার ভাঙে একটা ঢেউয়ের পর আরেকটা ঢেউ যেমন
অদৃশ্যে তলিয়ে যায় ঠিক তেমন; আসলে শেষদৃশ্যে-
বালুকণা শুষে নেয় জীবনেরসমূহ রসস্বাদন!

লুকোচুরি খেলায় কেবলই ফাঁকি জীবনের পড়তে পড়তে
আর নিষিদ্ধ আগুনে হাত রাখলে বারুদগন্ধের ধোঁয়া
লুকোচুরি খেলা আর নিষিদ্ধ আগুন যেনো পরস্পরের মিত্রস্বরূপ!

আজ রাতে জীবন্ত সুন্দর হয়ে উঠুক জোনাকফুলের গুঞ্জরণ
জোছনামেখে সারাদেহে ডুবসাঁতার দেবো কালোচুলের নদীতে


নদী
.........................................

বাড়ির পাশেই ধলেশ্বরী নদী
নদীর মধ্যেই ছিলো শৈশবে হারিয়ে যাবার ভয়
ভয়ের পাশেই সরলরেখার মতো নদী ভাঙনের সুর তুলে চলে গেছে
নিজস্ব ঠিকানায়; অথচ নদী নয়-
সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো গর্জন করে তছনছ করেছে রাষ্ট্রযন্ত্রের অশুভ হাত
বেদখল হয়ে গেছে পৈত্রিক বসতভিটা, বাড়ির উঠোন-
আব্বার স্বপ্নের বৃক্ষসংসার;- নদী, তুমি এখন আরো স্বাস্থ্যবতী হয়েছো
আর আমার বসতভিটায় ফুটে ওঠেছে সারিবদ্ধ অট্টালিকার দঙ্গল
এসব দৃশ্য দেখতে দেখতেই মিশে যাচ্ছি নশ্বর ধূলোয়

নদী, তুমি এখন বড়ই নির্জন; আর আমি বাস্তবমুখী একটি মানুষ!


নদীবৃত্তান্ত
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

জলাভূমি তুমি নিষ্কাশিত হয়ে যুগে যুগে গড়ে ওঠলে সমতল রূপে;
কার্বোনিফেরাস যুগের জমতে থাকা রাজ্যের মাটি ফুঁড়ে বিস্ফোরিত-
হয়ে ভৌগলিক রেখায় নিয়ে এলে বিবর্তনের হাওয়া; তারপর কোথাও
সৃষ্টি হলো গভীর খাত কিংবা কোথাও মাটির ঢিবির মতো সু-উচ্চ পাহাড়।

পাহাড় তুমি রুক্ষ্ম-শুষ্ক, কোথাও বরফ আবৃত; কোথাও সবুজ অরণ্যেঢাকা-
রহস্যাবৃত এক বিরাণভূমি। এই যে বরফ আবৃত দেহ; ক্ষয় হতে হতে তুমি
ঝর্ণা হয়ে গড়িয়ে পরো জলধারা রূপে পাহাড় বেয়ে; তোমার তীব্র-গতিবেগ
ছুটে চলে উচ্চাংশ থেকে মাটিমুখী অজানা দিক-দিগন্তে ছড়িয়ে পরে যখন-
তখন তাকেই প্রকৃতি নদী নামে ডাকে। ও নদী, তুমি ছুটে চলো কোথায় ?
তোমার চলার পথে নুড়ি,বালি আর পলি আহরণ হয়ে ছুটে চলে সমুদ্রগামি।

প্লায়োসিন যুগের পূর্বধারায় সৃষ্টি হলো সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র যা প্রাগৈতিহাসিক
আবার তোমাকে ঘিরেই দেখো গড়ে ওঠেছিলো সিন্ধু কিংবা হরপ্পার প্রাচীন সভ্যতা
তোমার বিস্তীর্ণ জলধারায় মিশে গিয়ে উদারতা শিখে নিয়েছে মানব জীবনেরগতি
ও নদী, তুমি ছুটে চলেছো অভিন্ন উদ্দেশ্যে যেখানে আ-দিগন্ত জলরাশি একাকার।




পুকুর
................................................

হারিয়ে গেছে শৈশবের ডুবসাঁতার; বাড়ির পাশে কোন পুকুর নেই
একদিন শ্যাওলায় জমে ওঠা পুকুরকেই মনে হতো খেলার সবুজ মাঠ
আর সেখানে নির্ভারে হংসপাখির দল ছুটে বেড়াতো দুরন্তপনায়
এসব এখন আত্মরচিত খ-িত স্মৃতিকথার সমবেত জালবোনা

অতীতের মতো পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে দেখা হয় না সূর্যস্নান; দেখা হয় না-
পাশের বাড়ি থেকে ঘাটে আসা শ্যামাবরণ মেয়েটির মুখচ্ছবি কিংবা
তার হাতে ধোয়া বাসি-বাসনের ঝনৎকার শব্দ আর জলের ছলাৎছল

বর্ষাকালে পুকুরজলে পাট ভেজানোর ধুম চোখে পড়ে না; চোখে পড়ে না-
ভেজাপাটের আঁশ তোলা নারীদের সারিবদ্ধ উৎচ্ছ্বাসের ছবি;-আহা ভেজাপাট
এখনো তোমার মাতাল ঘ্রাণ নাকে ভেসে আসে হারানো দিনের মতো

পরিভ্রমণে বোঝা যায়; পূর্ব-পুরুষের রেখে যাওয়া অহমিকার মুখোমুখি বসে-
দেখছি, সমস্ত পুকুর জলহীন হয়ে পড়েছে অহংকারে;- আর মায়ের স্মৃতিকথারা
দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে এখনো জেগে থাকে আবার মৎস্য প্রজনন হবে পুকুরজলে।




স্মৃতিগ্রাম
.............................................

ধলেশ্বরী নদীর তীর ঘেঁষা ঠিক দক্ষিণ ধারে নয়াগাঁও গ্রাম
এই গ্রামের মাঝখান দিয়ে পিচঢালা রাস্তাটি সরু পথ নিয়ে চলে গেছে শহরমুখী
পীতবর্ণের এই মাটিতেই ছিলো আদি বসতি আমার; যে বাড়িটিতে থাকতাম
অতীতে তা ছিলো নির্জন একটি বাগানবাড়ি; আজ সেখানে বাড়ি নেই, বাগান আছে
যেখানে আভিজাত্য মার্কা মৌমাছিগুলো খেলে বেড়ায় নিজস্ব উচ্ছ্বাসে

ছেড়ে আসা জন্মভূমির সেই মাটি আমার যেনো কাঁদছে অথচ
ওই মাটির গন্ধ-মায়া কোনটার সাথেই আজ আমাদের সম্পর্ক নেই
কিন্তু মনের ভেতর শৈশব আর কৈশোরের বেড়ে ওঠার সম্পর্ক ডাক দিয়ে যায়
ডাক দিয়ে যায়-ফেলে আসা ভাঙাবাড়ির উঠোন জুড়ে জনকের পদচিহ্ন
আর তার বৃক্ষরোপনের সেই স্বভাবরূপ পরিচর্চার গল্পকথা; যার চিহ্নস্বরূপ ওই মাটিতে
এখনো দাঁড়িয়ে আছে অসহায়ের মতো একটি নারকেল বৃক্ষ এবং আরো কিছু ফলাদি

গোধূলি সন্ধ্যা মুহূর্তে অস্তগামি সূর্য একদলা রক্তের মতো ছুটে যাচ্ছে ক্ষত-বিক্ষত করে
আর আমরা ফিরে যাচ্ছি যার যার গন্তব্যে; অথচ সামনে গন্তব্যহীন অন্ধকার....


(এআই/এস/নভেম্বর ১৩ ,২০১৬ )