গাইবান্ধা প্রতিনিধি : রংপুর চিনিকলের আওতাধীন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতাল পরিবারের জন্য পাঠানো জেলা প্রশাসনের ত্রাণ সামগ্রী ফিরিয়ে দিয়েছেন সাঁওতালরা।

সোমবার সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দীর্ঘ চেষ্টা করেও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা সম্ভব হয়নি।

এর আগে, সকালে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের মাদারপুর ও জয়পুরপাড়ার সাঁওতাল পল্লিতে ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতালদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করতে যান গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল হান্নান। এসময় তার সাথে সাপমারা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বর আব্দুর রউফ ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

এসময় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে প্রাথমিক তালিকাভুক্ত ১৫০ জন সাঁওতাল পরিবার তাদের শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সরকারি ত্রাণ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। পরে ত্রাণ বিতরণ না করে ফিরে আসেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আব্দুল হান্নান।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল হান্নান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, জেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত ১৫০ সাঁওতাল পরিবারের জন্য ৬ মেট্রিক টন চাল এবং ৫০ হাজার টাকা ও ৩০০ কম্বল বরাদ্দ করেন। ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের জন্য সাঁওতাল পল্লিতে গেলে ত্রাণ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায় সাঁওতালরা। ফলে বাধ্য হয়ে তিনি ত্রাণ সমাগ্রী বিতরণ না করে ফিরে আসেন। তবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ইউপি মেম্বর আব্দুর রউফ জানান, সাঁওতালদের দাবি হচ্ছে উচ্ছেদকৃত জমিতেই তাদের পুনর্বাসিত করতে হবে, ওই জমির চারপাশ থেকে অবিলম্বে চিনিকল কর্তৃপক্ষের কাঁটা তারের বেড়া অপসারণ এবং আখ চাষ বন্ধ, সাঁওতালদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

এছাড়া গোবিন্দগঞ্জর সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ এবং সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাকিল আহমেদ বুলবুল, ভূমি উদ্ধার কমিটির সম্পাদক শাহাজাহান আলীসহ তাদের উচ্ছেদ, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটে সহযোগিতা করা এবং তাদের জমি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আদায়ের বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন সাঁওতালরা।

জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ সাঁওতালদের জন্য জরুরি ত্রাণ সহায়তা হিসেবে ৬ মেট্রিক টন চাল, ৫০ হাজার টাকা ও ৩০০ কম্বল বরাদ্দ করেন। ওই দুটি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ১৫০টি পরিবারের জন্য ত্রাণ প্যাকেজ করা হয়।

এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হয়, গৃহহীন ও ছিন্নমূল সাঁওতাল পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে গোবিন্দগঞ্জের কাটাবাড়ি এলাকায় ১০ একর খাস জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। যেখানে তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেয়া হবে। তদুপরি ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতাল পরিবারগুলোকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে উপজাতীয় নৃ-তাত্তি¡ক জনগোষ্ঠীর বিশেষ উন্নয়ন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যাতে তারা আর্থিক ও সামাজিকভাবে উন্নত জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

(ওএস/এএস/নভেম্বর ১৪, ২০১৬)