চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গোবিন্দহুদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির দুই সহোদর জাকিরল ও মনিরলকে পিটিয়ে জখম করার ঘটনায় ধর্মীয় শিক্ষক কুতুব উদ্দীনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আজ সোমবার বিদ্যালয় থেকেও তাকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে ম্যানেজিং কমিটি। বিদ্যালয় কমিটি ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের পিতা মজিবার রহমান বাদী হয়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বলে জানান দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ।

শিক্ষার্থীরা জানায়, উপজেলার গোবিন্দহুদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক কুতুব উদ্দীন দুপুরে ক্লাস নিচ্ছিলেন। এ সময় তিনি ৯ম শ্রেণির ছাত্র মনিরুলের কাছে আমাদের শেষ নবীর নাম জানতে চান। মনিরুল সঠিক উত্তর দিলে পুনরায় তাকে নবীর পিতার নাম জানতে চাওয়া হয়। এই প্রশ্নেরও সঠিক উত্তর দেয় মনিরুল। এবার তাকে প্রশ্ন করা হয় শেষ নবীর দাদার নাম কি? এ প্রশ্নেরও সঠিক উত্তর দিলে তাকে শিক্ষক কুতুব উদ্দীন প্রশ্ন করে বসেন নবীজির দাদার দাদার নাম কি? এর উত্তর দিতে না পারায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওই শিক্ষার্থীকে চুল চেপে ধরে বেদম পেটাতে থাকে ধর্মীয় শিক্ষক।

এ সময় একই ক্লাসের মনিরুলের জমজ ভাই জাকিরুল স্যারকে এভাবে না মারতে অনুরোধ জানায়। প্রত্যক্ষদর্শী রবিউল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী জানায়, মারতে নিষেধ করার পর স্যার আরও ক্ষিপ্ত হয়ে লাঠি দিয়ে দুই ভাইকেই পেটাতে থাকে। পেটাতে পেটাতে ক্লাস রুমের বাইরে নিয়ে আসেন। সেখানে বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকদের সামনেই বেদম পেটাতে থাকেন অভিযুক্ত শিক্ষক। নির্যাতনের এক পর্যায়ে রক্তাক্ত হবার পর ওই দুই শিক্ষার্থী জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

পরে সহপাঠীরা মনিরুল ও জাকিরুলকে উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। ঘটনাটি জানাজানি হলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থীর মা বেলী খাতুন অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান জানান, ঘটনাটি দুঃখজনক। ঘটনার সময় ওই শিক্ষককে বারবার নিবৃত্ত করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কর্ণপাত করেননি।

দামুড়হুদা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ কুমার শাহ জানান, ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। দোষী হলে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ জানান, এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে নির্যাতনের শিকার দুই শিক্ষার্থীর পিতা মজিবার রহমান।

অভিযুক্ত শিক্ষক কুতুব উদ্দিনের সঙ্গে নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

(টিটি/এএস/নভেম্বর ১৪, ২০১৬)