মেহেদী হাসান,কেশবপুর (যশোর) থেকে :কেশবপুরে একশত তিন বছর বয়সেও ভ্যান চালাতে হয় সোনাই মোড়ল ওরফে কুনা চাচাকে। সংসারের হাল ঘুরাতে ঘুম থেকে উঠে ভ্যান নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হয় সড়কে। যাত্রীসহ শহরের বসবাসকারী মানুষের বাজারের থলে বহন করে যা উপার্জন হয় তা থেকেই তার সংসার চালাতে হয়। কুনা চাচার বসবাস পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হাবাসপোল এলাকায়। ৭৫ বছর ধরে তিনি রিক্সা ও ভ্যান চালাচ্ছেন।

কুনা চাচার সাথে কথা হয় শহরের পুরনো বাস স্ট্যান্ড এলাকার অনন্ত স্মৃতি সড়কের সামনে। তিনি জানান, বৃটিশ আমলের শেষ দিক থেকে তিনি প্রথমে কেশবপুরে রিক্সা চালানো শুরু করেন। হাবাসপোল থেকে রিক্সায় বেরিয়ে যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের গুটলে তলা থেকে একজন যাত্রী নিয়ে কেশবপুর বাজারে গেলে ৪(চার) পয়সা দিত। (গুটলে তলা থেকে কেশবপুর বাজারের পুরনো বাস স্ট্যান্ড-পর্যন্ত- দূরত্ব প্রায় ১ কিলোমিটার) ৪ পয়সা থেকে যাত্রী বহন শুরু হয় তার। এখন সেই একই দূরত্ব ওই স্থান থেকে শহরে একজন লোক নিয়ে এলে ভাড়া ৫ টাকা। বয়সের কারণে সাধরণত যাত্রীরা তার ভ্যানে উঠতে চায়না। যে কারণে তিনি শহরের বিভিন্ন দোকানের মালামাল ও বাজারের থলে বহনের কাজ করে থাকেন।

তার ১টি ছেলে ও ৫টি মেয়ে রয়েছে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেও আলাদা সংসার পেতেছে। তিনি ভ্যান চালিয়ে ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলের আলাদা সংসার করার কারণে কুনা মোড়ল স্ত্রী ফুলমতিকে (৮০) নিয়ে আলাদা সংসার করতে হচ্ছে। দুজনের সংসারের হাল ঘুরাতে তাকে ভ্যান চালাতে হয়। ভিটাবাড়ি ছাড়া তার কোন ফসলি জমি নেই।

তিনি বলেন, সাধারণত কোন যাত্রী ভ্যানে উঠতে চায়না। যে কারণে তিনি শহরের পুরনো বাস স্ট্যান্ড এলাকার বিভিন্ন দোকানের টুকিটাকী মালামাল বহনসহ বিভিন্ন লোকের বাজারের থলে পৌছে দিয়ে যা উপার্জন হয় তাতে তার সংসার চলে। বর্তমান যা উপার্জন হয় তাতে তার সংসার চালাতে হিমসিম পোহাতে হচ্ছে বলে জানান।

তার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন আছে। কিন্তু বয়স্ক ভাতার টাকায় সংসার চলেনা বলে তাকে এ বয়সেও ভ্যান নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হয় উপার্জনের জন্য। কথা বলার ভেতর কুনা চাচা বলেন দু’দিন ভ্যান চালাতে না পারলে সমস্ত শরীর ব্যথা হয়ে পড়ে। যে কারণে সংসারের হাল ঘুরানোর পাশাপাশি নিজের শরীর ভাল রাখার কারণেও তাকে নিয়মিত ভ্যান চালিয়ে যেতে হয়।

এব্যাপারে কেশবপুর পৌসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম মোড়ল বলেন, তাকে তিন মাস ধরে ২০ কেজি করে চাল বিনা মূল্যে দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে পৌরসভার পক্ষ থেকে আরো সহায়তা করা হবে।

কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ রায়হান কবির বলেন, আগামীতে সরকারের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহায়তা করা হবে। কেশবপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, কনা চাচার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড আছে। তিনি প্রতি মাসে ৪০০ টাকা করে পান।




(এমএইচ/এস/নভেম্বর ১৫ ,২০১৬ )