অভিজিৎ রাহুল বেপারী, পিরোজপুর : বাবার কবর জিয়ারত ও শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত পিরোজপুরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তার পিতা ফায়জুর রহমান আহম্মেদ স্বাধীনতা পুর্ব তৎকালিন পিরোজপুর মহাকুমা পুলিশ প্রধান ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৪ মে ফায়জুর রহমানকে পাকহানাদার বাহিনী পিরোজপুর বলেশ্বর নদীর তীরে গুলি করে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয় নদীতে।

পরবর্তীতে লাশ উদ্ধার করে সমাহিত করা হয় পিরোজপুর পৌর কবরস্থানে। সে সময় ড. জাফর ইকবাল ও তার পরিবারের সদস্যরা পিরোজপুরে বসবাস করতেন। শুক্রবার সকালে ড.জাফর ইকবাল, তার ছোট ভাই আহসান হাবিব, বড় বোন সুফিয়া হায়দার, তাদের স্ত্রী ও পুত্র কন্যারা ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পিরোজপুরে আসেন। সকালেই প্রথমে তিনি সবাইকে নিয়ে বাবার কবর দেখতে যান ও দোয়া করেন। এরপরে বলেশ্বর ঘাটের শহীদ স্মৃতি স্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে শৈশবকে স্বরন করে খেয়া নৌকায় বলেশ্বর নদে নৌ ভ্রমণ করেন এবং শহরের উত্তর দিকে যেখানে তার বাবার লাশ পাওয়া গিয়েছিল সেখানে যান।

বিকালে পিরোজপুর টাউনক্লাব মাঠ স্বাধীনতা মঞ্চে এক শিক্ষার্থী সমাবেশ ও তার প্রায়ত পিতার স্মরণ সভায় যোগদান করেন। এখানে শহর ও শহরতলির বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, শুধু আমার বাবাকে স্মরণ নয়, মুক্তিযুদ্ধে পিরোজপুরে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রত্যককেই স্মরণ করতে হবে।

পিরোজপুরকে আমার নিজের জায়গা মনে করি। এখানে আমার বাবা শহীদ ফয়জুর আহমেদ শুয়ে আছেন। পিরোজপুরের সড়কগুলোকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরনে আমি অভিভূত। কিছুদিন আগেও বলা হত বাংলাদেশ দিয়ে কিছু হবেনা। এমন সময় আসবে বাংলাদেশ ইউরোপ এর মত উন্নত দেশ হবে। এখন আমরা বিদেশে যাই চিকিৎসার জন্য, বিদেশীরা একসময় এদেশে চিকিৎসা নিতে আসবে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে জাফর ইকবাল বলেন, তোমরা লেখাপড়া করলে দেশ পাল্টে যাবে। পৃথিবীর কোন দেশ বাংলাদেশকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না,মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তোমাদের পড়তে হবে। বিদেশে ছিলাম, দেশে ফিরে জীবনটা পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করতে পেরেছি। একসময় শিক্ষার্থীরা আমার কাছে জানতে চাইত রাজাকারদের গাড়ীতে পতাকা কেন। তাদের প্রশ্নের জবাবে আমি কিছুই বলতাম না। এখন রাজাকারদের বিচার হয়েছে, সাজা হয়েছে। সাজা কার্যকর হয়েছে।

জাফর ইকবাল বলেন, আমার মা কালো হলেও, গ্রাম্য ভাষায় কথা বললেও সে আমরা মা, তাকে আমরা মা ই ডাকি, কোন সুন্দরী নায়িকাকে মা ডাকি না। নাগরিক সংর্বধনায় সভাপতিত্ব করেন পিরোজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এস এম সোহরাব হোসেন। বক্তব্য রাখেন জাফর ইকবালের সহধর্মীনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এ্যাডভোকেট এম এ মান্নান, জাফর ইকবালের বোন সুফিয়া হায়দার, ভাই কার্টুনিষ্ট আহসান হাবীব শাহীন, পিরোজপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার গৌতম নারায়ন রায় চৌধুরী, এম এ রব্বানী ফিরোজ। শেষে তিনি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। শনিবার স্থানীয় খলিশাখালী মাদ্রাসায় তার মরহুম পিতার জন্য কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মোনাজাত শেষে মাদ্রাসার ছাত্রদের একবেলা খাবার আয়োজন করেন। বিকালে আবার লঞ্চযোগে ঢাকায় চলে যান।

(এআরবি/এএস/নভেম্বর ১৮, ২০১৬)