আল আমিন


অনেক দিন ভাবছিলাম কোথাও বেড়াতে যাব, কিন্তু হয়ে উঠছিল না। কারণ প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে যাওয়ার সুযোগ নাই। তাই নিজেদেরই বেড়াতে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম এবার যাবোই। কোথায় যাওয়া যাই! পরিচিতদের কাছ থেকে এবং নেট ঘেটে সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা যাব বান্দরবন।

যাত্রা শুরু করবো ঢাকা থেকে ২২ অক্টোবর রাতে। তিন দিন আগে বান্দরবনের টিকিটের জন্য গেলাম কলাবাগান টিকিট কাউন্টারে । বান্দরবনের বাস এখান থেকে ছাড়ে । তিন দিন আগে টিকিট কাটতে গিয়েও হানিফ, শ্যামলী, ঈগলে টিকিট পেলাম না। ডলফিন নামে একটা বাসে টিকিট পেলাম। ভাড়া ৬২০ টাকা (নন এসি) রাত ১১ টাই কাটলাম যাতে সকাল সকাল পৌছাইতে পারি। তারপর প্রযোজনীয় জিনিস পত্র কিনে প্রস্তুতি নিলাম যাওয়ার জন্য। কিছু জরুরি ঔষধও নিলাম আর কিছু শুকনা খাবার। চার বন্ধু রাতে বাসের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হলাম। ঠিক রাত ১১ টাই বাস ছাড়ল। বাস চলছে মনে মধ্যে খুশীর ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। কতদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে।

বাসটা ভালই ছিল। সীটগুলো বেশ আরামদায়ক। ঢাকাতে সেই সময় অনেক গরম পড়ছিল। রাত ১টার দিকে কুমিল্লায় একটা তেল পাম্প প্লাস রেস্টুরেন্টে থামল। তারপর আবার বাস চলা শুরু করল। যখন ফজরের আজান দেয় তখন চট্টগ্রামে একটা হোটেলে নামাজ এবং খাবার বিরতি। বাস থেকে নেমে ত কাঁপাকাঁপি, বাইরে কি ঠান্ডা! পরে তাড়াতাাড় প্রয়োজনীয় কাজ সেরে আবার বাসে উঠে বসলাম। সাথে খাবার ছিল খেয়ে নিলাম। বাস আবার যাত্রা শুরু করল। বান্দরবন পৌছাতে সকাল ৭টা বেজে গেল।

বান্দরবনের উঁচু নিচু পাহাড়ি রাস্তা, বাসের ভেতর থেকে ভয়ই পাচ্ছিলাম এই বুঝি বাস খাদে গড়ে পড়লো। তবে ভালোও লাগছিল। বাস থেকে নেমে রিক্সা, সিএনজি ড্রাইভারের টানাটানি কোথায় যাবেন, কোন হোটেলে উঠবেন। আমাদের কাছে ভাল হোটেল আছে। আমাদের কাছে মনে হল এরা এক একজন দালাল টাইপের। আমরা তাদের কথা না শুনে সামনে হাঁটতে থাকি। এক মিনিট হাঁটার পর প্রথমে একটা হোটেল পাই নাম ‘হোটেল হিল ভিউ’ অনেক সুন্দর। ফাইভ স্টার হোটেল। তখন ছিল অফ সিজিন তাই হোটেল পাওয়া সহজ ছিল এবং ভাড়াও ছিল কম। রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করেই ঠিক করে নিই আজ কোথায় যাব। আজ যাব নিলাচল, মেঘালয়, স্বর্ণ মন্দির আর রুপালি ঝর্ণা।

হোটেল থেকে বের হয়ে ঠিক করলাম একটা মহেন্দ গাড়ি। বললাম এই কয় জায়গা যাব কত নিবেন। বললো স্বর্ণ মন্দির পর্যটকের জন্য নিষিদ্ধ করে দিয়েছ। অন্য গুলোতে নিয়ে যাব। ভাড়া ১০০০ টাকা। শেষে ৮০০ টাকায় রাজি হয়। প্রথমে গেলাম রুপালি ঝর্নায়। মেইন রাস্তা থেকে কিছুটা ভেতরে। ছোট ছোট ছেলেরা ওখানে গাইডের কাজ করে, আমাদের সাথেও একটা নিলাম। ওখানে টিকিট লাগে ১০ টাকা করে। পাহাড় বেয়ে নেমে আসছে ঝর্নার পানি, ওখানে দেড় ঘন্টা ছিলাম। তারপর গেলাম মেঘালয়। ঢুকতে ৫০ টাকা করে টিকিট। আর যদি কারে উঠেন তাহলে আরো ৪০ টাকা করে। ঢুকেই সামনে ঝুলন্ত ব্রীজ। তারপর উঁচু পাহাড়ি রাস্তা। মেঘালয়ে শুধু ঝুলন্ত ব্রীজ আর পাহাড়। উঁচু পাহাড়ের উপর খাবারের দোকান। সেখানে টাটকা ফল পাওয়া যায়। তারপর মেঘালয় থেকে বের হয়ে গাড়িতে করে নিলাচল। নিলাচলে ঢুকতে ৫০ টাকা টিকিট। ভূ পৃষ্ট হতে ২০০০ ফিট উপরে। সেখান থেকে শহরের বাড়ি গুলো অনেক সুন্দর লাগে। উপর থেকে দেখলে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। অনেকটা দার্জিলিং এর মত। ওখান থেকে দেখলে পৃথিবীটাকে অনেক সুন্দর মনে হয়। মনটা খুশিতে ভরে যায়। ওখান থেকে পেঁপে ও ডাব খেয়ে বিকেলে হোটেলের উদ্দেশে রওনা হলাম।

হোটেলে পৌছে দুপুরের খাবার খেলাম। খাবারের দাম একটু বেশি। পানির বড়ই অভাব। পানির বোতল কিনি নিতে হয়। যা কিনবেন তা মূল্য ছাড়া ৫ টাকা বেশি নিবে। তারপর ঘন্টা খানেক রেস্ট নিয়ে সন্ধ্যায় বার্মা মার্কেটে যায় ঘুরতে। বান্দরবনে রাতে বাইরে থাকা রিস্কি। তাই ৯টার দিকে হোটেলে চলে আসি।

(এএম/এএস/নভেম্বর ২৬, ২০১৬)