মাহবুব আরিফ


বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৬ খসড়া মন্ত্রীসভায় অনুমোদন দেয়া হয়। খুব ভালো কথা। সব কিছুই মেনে নেয়া যায়। তবে যে বিষয়গুলো মন্ত্রী সভায় আলোকপাত করা হয়নি সেগুলো হচ্ছে:-

একজন শিশুর এই পৃথিবীতে শিশু হয়ে বেচেঁ থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক পর্যন্ত পৌঁছানো তার অধিকার অথবা একজন প্রতিবন্ধী শিশু বা মানুষ জীবনের প্রতিটি স্তর পার করতে পারাটা তার একটি অধিকার, সমাজ তার এই অধিকারকে কেড়ে নিতে পারে না। জন্মের পর শিশুদের মানসিক বিকাশকে বুঝতে হলে প্রতিটি মা বাবাকেই প্রকৃত ভাবে অভিভাবক হবার প্রয়োজন আছে বৈকি। আমার যতটা সহজে বাবা ও মা হয়ে পরি ঠিক ততটা সহজে অভিভাবক হয়ে উঠতে পারিনা, শিক্ষা ও জ্ঞানের অভাবটাই হচ্ছে এর মূল কারণ। একটি শিশু বেড়ে উঠার সাথে সাথে বয়সের বিভিন্ন সন্ধিক্ষণে এক একটা অন্তরায় অতিক্রম করে, প্রতিটি স্তর অতিক্রম করা হচ্ছে একটি মানুষের পূর্ণ অধিকার।

মাননীয় বিজ্ঞ মন্ত্রী মহোদয়গণ যদি জ্ঞানের আলোকে আইনের সংশোধন করতে না পারেন, দয়া করে আপনারা সরে দাঁড়ান, আপনাদের দ্বারা দেশের মানুষের উন্নয়ন সম্ভব নয় ।

পিতা মাতা হলেই যে অভিভাবক হওয়া যায় না বিশেষ করে বাংলাদেশের মত একটি অনুন্নয়ন দেশ যে দেশে অনেক মানুষ এখন পর্যন্ত শিক্ষার আলো পায়নি। এ বিষয়টির উপর আলোকপাত করার প্রয়োজন ছিল বৈকি।

অভিভাবকহীন প্রতিবন্ধী কিশোরীর থাকার জায়গা না থাকলে ১৮ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা না করে মঙ্গলজনক মনে হলে বিয়ে দেওয়া যেতে পারে বিষয়টি অন্তত আমার দৃষ্টিতে একটি বর্বরোচিত বিধান যা কিনা মানবতার সকল মাত্রা ছাড়িয়ে যায় , একজন প্রতিবন্ধী মানুষ হয়ে জন্ম নেয়া নিশ্চয়ই তার অপরাধ বলে বিবেচিত হতে পারেনা, প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নিলেই যে তাকে শাস্তি সরূপ বাল্যবিবাহ দিয়ে দিতে হবে তা সত্যই দুঃখজনক। একটি দেশ বা একটি সমাজ যদি একজন অভিভাবকহীন প্রতিবন্ধীর দায় ভার বহন করতে না পারে তবে সেই দেশ বা সমাজকে উন্নয়নের সাগরে ভেসে যাচ্ছে বলাটা মোটেই যুক্তি সঙ্গত নয় । এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার যে আইন, খাদ্য-বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও কর্ম বিষয়গুলো আপনাদের নজরে ছিল কি ? একজন প্রতিবন্ধী হলেই যে তার একটি বাসস্থান একটি ঘর একটি চাবি থাকবে না এটা তো বলা হয়নি, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনটি নিশ্চয়ই সকল মানুষের জন্যেই সমান ।

আমি বলি কি মন্ত্রী সভায় যতদিন শিক্ষিত, মেধাবী ও মানবিক মানুষদের আবির্ভাব না হবে ততদিন আমাদের অন্ধকার জগতেই নিমজ্জিত থাকতে হবে।

এবার দেখা যাক এই আইনের ১৯ ধারাতে কি বলা হচ্ছে:- "আইনের ১৯ ধারায় উল্লেখিত বিশেষ বিধানের ব্যাখ্যা সম্পর্কে মন্ত্রীপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, বিশেষ প্রেক্ষাপটে আদালতের নির্দেশ ও মা-বাবার সম্মতিতে অনুষ্ঠিত বিয়ে বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। দৃষ্টান্ত হিসেবে তিনি বলেন, অবিবাহিত মা বা অন্য কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বেলায় এই বিধান প্রযোজ্য হবে।"

একজন অবিবাহিত মা !!! এ ক্ষেত্রে অবিবাহিত মায়েরা কি অসহায় বা নিষ্কর্মা ? তবে তো সকল অবিবাহিত মায়েদের এই বিশেষ সুবিধা গ্রহণ করে একটি শিশু তার শিশু থেকে বেড়ে ওঠার ও শিশু জীবনের সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে, একজন মাকে এই অধিকার কে দিয়েছে ? বিষয়টি অমানবিক নয় কি ? অদ্ভুত আমাদের মন্ত্রীদের জ্ঞান ও বুদ্ধি । সরকার ও সমাজের দায়বদ্ধতা এড়াতেই কি এই খসরা আইনের অনুমোদন দেয়া হলো ।

একটি শিশু একজন মানুষের সকল মানবিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়েই এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে কিন্তু আমরা কজন সেই শিশুকে সেই অধিকার প্রকৃত অর্থে দিতে জানি বা পেরেছি। যখন কোনও অঘটন ঘটে যায় তখন সামাজিক পরিবেশের উপর দোষারোপ করতে থাকি, আমরা নিজেরাই ভুলে যাই যে আমাদের আইন, সমাজ, সরকার প্রকৃত অভিভাবকের মত আচরণ করতে পারিনি বিধায় দোষটা অনেকটা আমাদের ঘাড়ের উপরই বর্তায়।

এ ক্ষেত্রে আমি বলতে চাই, মা বাবা, আদালত কি সমাজ কোন কিছুর সমর্থনেই একটি শিশুকে কোন অবস্থাতেই বাল্যবিবাহে দিয়ে তার অধিকারকে খর্ব করা যায় না , অপ্রাপ্ত বয়সে একজন প্রতিবন্ধী বা একটি শিশুকে বিবাহ কর্মে বাধ্য করা একটি চরম মানবতা বিরোধী কর্ম । আমি এই খসড়া আইনে অনুমোদনের তীব্র থেকে তীব্রতর প্রতিবাদ জানাই ।
আসুন আমার সমাজের উঁচু জায়গাতে অধিষ্ট থেকেও মানুষের মত আচরণ করতে শিখি।

লেখক : সুইডেন প্রবাসী