গোলাম কবির বিলু, পীরগঞ্জ : পীরগঞ্জের চৈত্রকোল ইউপি’র চেয়ারম্যান ও রাজাকারের ছেলে এলাকাবাসী ও সমিতির সদস্যদেরকে জামায়াত শিবিরের মামলায় জড়ানোর হুমকি দেখিয়ে রাস্তায় লাগানো ৫ লক্ষাধিক টাকা মুল্যের দেড় শতাধিক গাছ বিক্রির পর কর্তন করা হয়েছে। ওই ঘটনায় খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) গাছগুলো জব্দ করে ইউপি সচিবের জিম্মায় দিয়েছেন। গতকাল সোমবারও গাছ কাটা হয়েছে। গতকাল চৈত্রকোল ইউপি’র তহশিলদার বাদী হয়ে ওই ইউপি চেয়ারম্যানসহ কয়েকজনকে আসামী করে থানায় মামলা হওয়ার কথা জানা গেলেও ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চৈত্রকোল ইউনিয়নের পালগড় মাদরাসা থেকে শিবারপাড়া সড়কে প্রায় ১২ বছর আগে ইউনিক যুব উন্নয়ন সংস্থার ৪০ সদস্য সামাজিক বনায়ন কর্মসুচীর আওতায় ইউক্যালিপটাস গাছ লাগায়। গাছগুলো বিশাল বড় হওয়ায় নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান সবুজের চোখ পড়ে যায়। একপর্যায়ে ওই ইউনিয়নের শাল্টি (পশ্চিমপাড়া) গ্রামের রাজাকার তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে পালগড় দাখিল মাদরাসার সুপার আব্দুল মোতাল্লেব লুলু মিয়ার সাথে যোগসাজস করে উল্লেখিত সড়কের গাছগুলো কাঠ ব্যবসায়ী ওয়ারেছ মিয়ার কাছে ৪ লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি করে দেয়।

গত শুক্রবার দুপুরে গাছগুলো ওই কাঠ ব্যবসায়ী কাটা শুরু করে। এ সময় এলাকাবাসী এবং ওই সমিতির সদস্যরা বাঁধা দিলে ওই রাজাকারের ছেলে আব্দুল মোতাল্লেব লুলু জামায়াত-শিবিরের মামলায় জড়ানোর হুমকি দেয় বলে সদস্য আব্দুল হাকিমসহ গ্রামবাসী জানায়। পাশাপাশি ইউপি চেয়ারম্যানও এলাকাবাসীকে জামায়াত-শিবিরের মামলায় জড়ানোর হুমকি দেয়ায় কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না বলে গ্রামবাসী জানায়। ইতিপূর্বে ওই চেয়ারম্যান জামায়াত-শিবিরের পৃথক ২টি মামলায় নিরপরাধ এলাকাবাসীকে জড়ানোর কারণে অনেকেই গ্রামছাড়া হয়ে আছেন বলে জানা যায়।

গাছগুলো কাটার ব্যাপারে গত রবিবার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) কে অবগত করা হলে তিনি তা জব্দ করে ইউপি সচিব শফিকুল ইসলামের জিম্মায় দেন। বিধান রয়েছে, উপজেলা বন ও পরিবেশ কমিটির অনুমোদন ছাড়া সামাজিক বনায়নের গাছ কর্তন করা যাবে না। তারপরও চৈত্রকোল ইউপি’র চেয়ারম্যান এই অনিয়ম করেছেন বলে উপজেলা বনবীট কর্মকর্তা আলাল মিয়া জানান। তিনি আরও জানান, ইউএনও স্যারের নির্দেশে আমি গাছগুলোর ব্যাপারে আজ (গতকাল) তদন্ত করতে যাচ্ছি।

মামলার বাদী তহশিলদার নুরে আলম বলেন, এ্যাসিল্যান্ড স্যারের নির্দেশে আমি বিকেল ৩টার দিকে থানায় মামলার জন্য এজাহার দিয়েছি। মামলায় চেয়ারম্যান ও সমিতির সদস্যদেরকে আসামী করা হয়েছে। ওই রাজাকারের ছেলে আব্দুল মোতাল্লেব হোসেন লুলু বলেন, আমরা রেজ্যুলেশন করে ইউপি চেয়ারম্যানকে গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছি। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান বলেন, আমি গাছগুলো জব্দ করে ইউপি সচিবের জিম্মায় দিয়েছি। গতকাল সন্ধ্যা ৬ টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় থানার ওসি রেজাউল করিম বলেন, আমি এখন পর্যন্ত অভিযোগ পাইনি, জানিও না। মামলার বিষয়ে এজাহারকারী এবং ওসির বক্তব্য নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।

(জিকেবি/এএস/নভেম্বর ২৯, ২০১৬)