নীলফামারী প্রতিনিধি : স্বাধীনতার ৪৫বছর পেরিয়ে গেলেও নীলফামারীর ডোমার পৌর এলাকার ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আজিজার রহমান (প্রায় ৭০) আজও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি। তালিকায় নাম লেখাতে বর্তমানে বিভিন্নজনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি।

জানা গেছে, ডোমার পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আজিজার রহমান দীর্ঘ ৪৫বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অধিনায়ক মোহাম্মদ আতাউল গনী ওছমানীর সাক্ষরিত একখানা সনদপত্র নিয়ে তিনি বিভিন্নজনের কাছে ধর্না দিচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম লেখানোর জন্য।

রবিবার তার বাড়িতে যুদ্ধকালীন সময়ের কথা বলতে বলতে তিনি কেঁদে ফেলেন। তিনি জানান, তিনি জন্মসূত্রে পার্শ্ববর্তী বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার রামগঞ্জ বিলাসী গ্রামের বাসিন্দা। তার পিতা মৃত আহাদ হোসেন প্রধান সেখান থেকে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে ভারতে যায় এবং মুজিব ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। সেখান থেকে তিনি তেতুলিয়া, ভোজনপুর, জগদল, ইসলামপুর, থুকরাবাড়ী ক্যাম্পে নাসির কোম্পানীতে আলাউদ্দিন হাওলাদারের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেন। দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অধিনায়ক মহম্মদ আতাউল গনী ওছমানী এবং আঞ্চলিক অধিনায়ক খাদেমুল বাশারের সাক্ষরিত একখানা সনদপত্র হাতে নিয়ে তিনি নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন।

সনদ অনুযায়ী তিনি এফ এফ-৬৩/২৫ মোঃ আজিজার রহমান পিতা-মৃত আহাদ হোসেন প্রধান, গ্রাম রামগঞ্জ বিলাসী, থানা-দেবীগঞ্জ, জেলা-দিনাজপুর লেখা রয়েছে। তিনি ৬ক নং সেক্টরে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছেন। সনদপত্রের অনেককাংশে ক্ষয়ে গেছে পরে সেটি লেমিনেটিং করে অতি যত্নে রেখেছেন। জীবিকার তাগিদে ১৯৭৫সালে তিনি স্ব-পরিবারে ডোমারে এসে জনৈক আব্দুল হামিদ চৌধুরীর জমিতে স্থায়ী নিবাস গড়েন। তিনি মারা যাওয়ার পর আজিজার রহমানের ঠাঁই হয় ৫নং ওয়ার্ডের ক্যানেলের পাড়ে। এর পর থেকে তিনি এ ব্যাপারে আর কোন পদক্ষেপ নেননি।

তিনি গত ২০১৩ইং সালে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্তকরণের জন্য দেবীগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির নিকট একখানা আবেদন করেন। কিন্তু অদ্যাবধি এ বিষয়ে কোন ডাক পড়েনি। তিনি আরো জানান,যুদ্ধকালীন সময়ে তার পিঠের ডান দিকে গোলার ছারা লাগে সে সময় সৈনিক হাসপাতালে অপারেশন করে তিনি সুস্থ্য হন। আজও তার দাগ রয়েছে। বর্তমানে তিনি কানে কম শুনেন।

তিনি ডোমার পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের ক্যানেলের পাড় গ্রামে সরকারি খাস জমিতে স্ত্রী, ১ছেলে ও নাতী, নাতনী নিয়ে বসবাস করছেন। অশ্রুসজল চোখে বলেন মুক্তিযুদ্ধ করেছি কিন্তু গর্ব করে বলতে পারছি না আমি মুক্তিযোদ্ধা। তাই মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে চাই তাতে মরেও শান্তি পাবো।

(এসআইএম/এএস/নভেম্বর ২৯, ২০১৬)