শেখর রায়


আমি খুব দুশ্চিন্তায় আছি। প্রিয় মাহবুবুল হক শাকিল বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া সচিব ও ব্যক্তিগত উপদেষ্টা যার ঢাকার কোন এক হোটেলের ঘরে গত পরশু রাতে আচমকা প্রাণহানি ঘটেছে ও আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন। আপাদমস্তক বাঙ্গালি বলতে যা বোঝায় তিনি তাই ছিলেন। সদা হাসি খুশি এই তরুণ কাব্য সাহিত্য চর্চা করতেন। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ছিল। তার এমন কিছু শরীর খারাপ হয় নি, যে কারণে তার এমন অস্বাভাবিক মৃত্যু হতে পারে। আমি কিছুতেই তার এই অকাল প্রয়াণ মেনে নিতে পারছিনা। তাকে কি ঠাণ্ডা মাথায় ছক করে সরিয়ে দেয়া হল - চিন্তা রয়ে গেল।

মনে পড়ে, তিনি বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রী ইনু ভাইয়ের সাথে কলকাতায় বাংলাদেশ পুস্তক মেলায় এসেছিলেন। দেখা হল, কথা হল। কি সাবলীল ছেলে সে। আমি তার হাতে তুলে দিলাম আমার লেখা একখানি গ্রন্থ। অনুরোধ করলাম, তিনি যেন শ্রীমতী হাসিনাকে এই পুস্তকটি আমার হয়ে তার হাতে তুলে দেন। তিনি সানন্দে আমার অনুরোধ রাখলেন। বড় ভাল লাগল তার এই সুন্দর ব্যবহার। তাই তাকে কি করে ভুলে যাব!

কিন্তু আমার দুশ্চিন্তা অন্য জায়গায়। শাকিল বংশ পরম্পারায় বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। বাংলার মুক্তি সংগ্রামের এক নিষ্ঠ সমর্থক। ছাত্র জীবন থেকে সে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষ শক্তি। পাকপন্থি জামায়ত বিএনপি জোটের বিরুদ্ধে লড়াই করে উঠে আসা আওয়ামী লীগ কর্মী। হাইব্রিড প্রাক্তন রাজাকার বেজন্মার সন্তান অধুনা লীগ নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধাচারি। যে জারজ সন্তানদের এক শক্তিশালী অংশ কেন্দ্রীয় ক্ষমতার আশে পাশে ঘুর ঘুর করছে আর দেশের সূর্য সন্তান সন্ততিদের চক্তান্ত করে দূরে ঠেলতে সফল হচ্ছে। মানে এক সফল চক্তান্ত করে সর্বচ্চ নেতৃত্বকে ঘিরে ফেলছে। তাদের সেই কাজে মনে হচ্ছিল প্রিয় শাকিল এক অন্তরায়। তাই তার বেঁচে থাকা হয়ত অনেকের কাছে নিরাপদ মনে হচ্ছিল না।

আমি সত্যি ভয় পেয়ে গেছি। কারন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড আমাদের যেন পিতৃ বিয়োগ ঘটিয়েছিল। তাজুদ্দিন সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতাদের জেল হত্যাকাণ্ড শুনে আতঙ্কিত হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম বঙ্গ জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে গেল। আর এতো দিন বাদে তার কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসীন হওয়াতে ফেলেছিলাম স্বস্তির নিশ্বাস। কিন্তু আবার যেন সীমান্তের ওপার বাতাসে ভেসে আসছে রক্তের গন্ধ।

ভারত তার হৃদয় দিয়ে গড়ে তুলেছিল বাংলাদেশ। তার পরাজয় ভারতের পরাজয়। একথা যেন বর্তমান দিল্লীশ্বর ভুলে না যায়। সময়ে সাবধান হলে হয়ত আমরা বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে পারতাম। সেই ভুল যেন আমরা আর না করি। জয় বাংলা।

লেখক : পশ্চিম বাংলার গণমাধ্যম কর্মী ও গবেষক।