পটুয়াখালী প্রতিনিধি : ৮ ডিসেম্বর, পটুয়াখালী মুক্ত দিবস। একাত্তরের এই দিনে পাকহানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয় পটুয়াখালী জেলা। এদিন একদিকে স্বজন হারানোর বিয়োগ ব্যথার দীর্ঘশ্বাস, অন্যদিকে মুক্তির আনন্দে উদ্বেল, আর সৃষ্টি সুখের উল্লাস।

১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল হানাদার বাহিনী কবলিত হয় পটুয়াখালী। প্রথম দিনেই তারা জেলা প্রশাসকের বাস ভবনের দক্ষিণ পাশে গুলি করে হত্যা করে ৭ আনসার সদস্যকে। মাতবর বাড়ির সামনে ১৭ মুক্তিসেনা শহীদ হন।

কাপুরোষোচিত ওই হামলা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে নারী-পুরুষ ওই সময় শহর সংলগ্ন লোহালিয়া ও লাউকাঠি নদীতে ঝাঁপ দেন।

পাক হানাদার বাহিনী পটুয়াখালীর পুরনো বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় ঘর-বাড়ি। চাঁদমারী, কালিকাপুর, মাতবর বাড়ি ও ডিসি বাংলোর দক্ষিণ পাশে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে নিরীহ মানুষ।

এর আগে ২৬ মার্চ পটুয়াখালী মহিলা কলেজে কন্ট্রোল রুম খোলেন মুক্তিযোদ্ধারা। পাশের জুবিলী স্কুলে শুরু হয় মুক্তি সেনাদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ।

বর্তমান পৌর শহরে অবস্থিত সরকারি মহিলা কলেজ এলাকায় স্থাপন করা হয় মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবদুল আউয়ালের সহায়তায় পুলিশ লাইন অস্ত্রাগার থেকে রাইফেল এনে তা তুলে দেওয়া হয় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে।

জেলার মাদারবুনিয়া, কালিশুরী, পাতাবুনিয়া, মৌকরন ও দুমকী এলাকায় পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন মুক্তিযোদ্ধারা।

১৮ নভেম্বর গলাচিপার পানপট্টিতে সম্মুখ যুদ্ধে পরাজয় হয় পাক হানাদারদের। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা পটুয়াখালী শহরে প্রবেশের পরিকল্পনা করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে ৭ ডিসেম্বর রাতে শহরে কারফিউ জারি করে পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা অন্ধকারে দলবল নিয়ে পটুয়াখালী ছেড়ে পালিয়ে যায়।

৮ ডিসেম্বর সকাল থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা জেলা শহরে মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পরে শিশুপার্কে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন মুক্তিযোদ্ধারা।

(ওএস/এএস/ডিসেম্বর ০৮, ২০১৬)