প্রবীর সিকদার  


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ১৮ ডিসেম্বর দিল্লী যাচ্ছেন আপনি। তিন দিনের সফর। ওই সফরেই  আমাদের  মুক্তিযুদ্ধের সময় মিত্র বাহিনীর সদস্য হিসেবে যুদ্ধে আসা ভারতীয়  ১ হাজার ৬৬৮ জন শহীদ সেনাকে সম্মাননা জানাবেন দেশের পক্ষে আপনি। বলতে দ্বিধা নেই, আপনার উদ্যোগ ও আগ্রহেই স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরে হলেও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওই ১ হাজার ৬৬৮ জন সদস্যকে সম্মাননা জানাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। শহীদ ওই ভারতীয় সেনাদের  স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে ৫ লাখ ভারতীয় রুপি দেওয়া হবে। সেই সাথে  শহীদ ভারতীয় সেনার পরিবারগুলোর হাতে একটি করে বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দিতে লেখা কৃতজ্ঞতাপত্র এবং ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হবে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় শহীদদের অবদান নিয়ে একটি বইও প্রকাশ করা হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সেনাদের সম্মান জানানোর এই সুমহান ও ঐতিহাসিক উদ্যোগ শুধু ভারতীয়দের কাছেই নয়, সারা বিশ্ববাসীর কাছেই বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে বিশাল এক উচ্চতায় নিয়ে যাবে। শহীদ ভারতীয় সেনাদের প্রতি এই সম্মান প্রকাশ আরেকবার প্রমাণ করবে, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আসলেই এক কীর্তি গাঁথার নাম। আর এই সবই সম্ভব হচ্ছে শুধুই আপনার দূরদর্শী ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্বের কারণে। স্যালুট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্যালুট।

বঙ্গবন্ধুর আহবানে বাংলাদেশের বেদিমূলে আত্মাহুতি দিয়েছেন ৩০ লাখ বাঙালি। আমাদের ঘরে ঘরে একাত্তরে স্বজন হারানোর আর্তনাদ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি যখন শহীদ ভারতীয় সেনাদের সম্মান জানানোর সমুদয় আয়োজন সম্পন্ন করেছেন, তখন কিন্তু দেশে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩০ লাখ মানুষ তথা তদের পরিবারগুলোর জন্য কোনও সরকারি স্বীকৃতি নেই। স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পরেও ওই শহীদদের সরকারি স্বীকৃতি জানানোর সহজ কাজটি আমরা তথা দেশ করতে পারেনি। আমরা কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩০ লাখ মানুষের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার সংকল্প ঘোষণা করি, কিন্তু ওই সাধারণ শহীদদের স্বীকৃতি ও সম্মান জানানোর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করি না কিংবা উদ্যোগ গ্রহণের দাবি করি না। এটা বড় বেদনার। ৩০ লাখ মানুষের রক্তের ওপর দাঁড়ানো বাংলাদেশ তাঁর শহীদদের যথার্থ সম্মান জানাবে না, এটা বড় বেদনার। সরকারি স্বীকৃতি না থাকায় সরকারি সুযোগ সুবিধা দূরে থাকুক, শহীদ পরিবারগুলো একাত্তরে হারানো স্বজনদের নিয়ে কোনো গর্বটুকু পর্যন্ত করতে পারে না। আর সেটা যে কী দুর্বিষহ যন্ত্রণা, তা শুধুই ওই লক্ষ লক্ষ শহীদের পরিবারের সদস্যরাই জানেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ছাড়া ওই লক্ষ লক্ষ শহীদ পরিবারের মর্মপীড়া ঘুচানোর কেউ নেই, দায়ও নেই কারো কোনো! কারণ আপনি ওই বঙ্গবন্ধুরই কন্যা, একাত্তরে যে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তাঁদের স্বজনরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে 'বাংলাদেশ' নামের এক নতুন মানচিত্র সৃষ্টি করেছিলেন। প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সেনাদের সম্মান জানিয়ে ফিরে আসুন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বহু সম্মানের ডালি নিয়ে। আমি আশায় বুক বেঁধে রইলাম, আপনি ঢাকায় ফিরেই মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩০ লাখ মানুষের সরকারি স্বীকৃতির ব্যবস্থা করে শহীদ পরিবারগুলোকে অন্তত তাঁদের একাত্তরে হারানো স্বজনদের নিয়ে গর্ব করবার সুযোগটি করে দিবেন।