নিউজ ডেস্ক : সঙ্গীত আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সংঙ্গীত পছন্দ করে না এমন মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া কঠিন। হোক তা ধীর লয়ের রবীন্দ্রসঙ্গীত অথবা হাই টেম্পোর কানফাটানো মেটাল গান। সঙ্গীতের সাথে সাথে পরিবর্তন হয় আমাদের আবেগ অনুভূতিও। সঙ্গীত আমাদের মাঝে যে পরিবর্তনগুলো এনে দেয় তা আসলেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এর সাথে সংযোগ আছে আমাদের মানসিক ও শারিরিক সুস্থতার। এমনকি সঙ্গীতের সাথে যোগাযোগ থাকলে এর ফলে শিশুরা বেড়ে ওঠে অনেক ভালোভাবে এবং প্রাপ্তবয়স্কদেরও পড়াশোনাসহ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য করে থাকে সঙ্গীত। ইউনিভার্সিটি অফ ফ্লোরিডার একটি গবেষনায় উঠে এসেছে এ সংক্রান্ত তথ্যগুলো।

আমাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে প্রভাব ফেলে সঙ্গীতের বিভিন্ন অংশ। স্বরের ওঠানামা, সুর এবং গানের কথা একেকটি একেক স্থানকে প্রভাবিত করে এবং এভাবে অন্য কোন কাজের চাইতে সঙ্গীত মানুষের মস্তিষ্কের সবচাইতে বেশি স্থান জুড়ে কাজ করে। নিয়মিত গান শুনলে ভাষাগত দক্ষতা বাড়ে, উন্নতি হয় সৃজনশীলতার এবং আমাদেরকে এটি হাসিখুশি রাখে। বিষণ্ণতা কাটিয়ে উঠে আশাবাদী করে তোলে আমাদেরকে। মানসিক প্রশান্তি এনে দেয় এবং আরোগ্যলাভের প্রক্রিয়া তরান্বিত করে। আলঝেইমারস, পারকিনসন্স, টরেটস ডিজিজ এবং অটিজম এর মত স্নায়বিক রোগের উপশম করতে পারে সঙ্গীত।

মস্তিষ্কের নিজস্ব তরঙ্গগুলোর মাঝে আছে আলফা, বেটা, গ্যামা, ডেলটা এবং থেটা তরঙ্গ। এদের কারনে তৈরি হয় বিভিন্ন আবেগ-অনুভুতি এবং প্রতিক্রিয়া। আলফা তরঙ্গ সেরোটোনিন নিঃসরণে ভূমিকা রাখে। মনোযোগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে দুর্বল বেটা তরঙ্গ কিন্তু শক্তিশালী বেটা তরঙ্গের উপস্থিতি তৈরি করতে পারে অযাচিত মানসিক চাপ। মানসিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে গ্যামা তরঙ্গ এবং এর উপস্থিতি রয়েছে মস্তিষ্কের সর্বত্র। থেটা তরঙ্গ দেখা যায় ঘুমের রেম পর্যায়ে এবং ডেলটা তরঙ্গ দেখা যায় খুব গাড় ঘুমের সময়ে যেটা প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে বিরল। এসব বিভিন্ন তরঙ্গের সাথে মিল রেখে একই রকম তরঙ্গ সম্বলিত সঙ্গীত শুনলে সেই রকমের আবেগ এবং প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করা যায়।

শিক্ষাক্ষেত্রেও সঙ্গীতের প্রভাব কম নয়, দেখা যায়, মিউজিক পারফরম্যান্স এবং মিউজিক অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্সে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা অন্যদের থেকে অনেকগুণ ভালো ফলাফল করছে স্যাট পরীক্ষায়। তারা শিক্ষাক্ষেত্রে পাচ্ছে বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ড এবং সম্মাননা। এছাড়াও তাদের মাঝে সহিংসতার প্রবণতা অপেক্ষাকৃত কম অন্যদের থেকে।সংঙ্গীত মানুষিক ক্লান্তি দূর করে ব্রেইনকে রাখে রিফ্রেস। তাই অনেক শিক্ষার্থী‌ মিউজিকের সাথে অংক করতেও বেশ উপভোগ করে থাকে।

প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি শিশুদের জীবনেও সঙ্গীতের ভূমিকা বর্ন‌নাতীত । মনে হতে পারে যে শিশুরা হয়তো ভালো সঙ্গীতের কিছুই না। আর তাছাড়া সংঙ্গীতের পিছনে সময় নষ্ট না করে পড়াশুনা করাই উচিত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শিশুদের বেড়ে ওঠায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে সঙ্গীত। সঙ্গীতের প্রভাবে মস্তিষ্কের এমন কিছু অংশ উদ্দীপ্ত হয় যেগুলো পড়াশোনার সাথে সম্পর্কিত। অল্প বয়সে সঙ্গীতের চর্চা থাকলে তাতে স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটে। সঙ্গীত শেখে যে সব শিশু তাদের মাঝে টিমওয়ার্ক এবং শৃঙ্খলার উন্নতি ঘটতে দেখা যায়। সঙ্গীতের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করতে শেখার মাধ্যমে বৃদ্ধি ঘটে তাদের আত্মবিশ্বাস এবং সৃজনশীলতার। আর তাই সংঙ্গীতকে অন্য সব শিল্পের মতো শুধু বিনোদন হিসেবে বিবেচনা করা উচিত হবে না। এজন্যই বুঝি অনবদ্য বিজ্ঞানী আইনেস্টাইন স্বয়ং বলেছিলেন আমি বিজ্ঞানী নাহলে মিউজিসিয়ান হতাম।
(ওএস/এএস/জুন ১৫, ২০১৪ )