স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, কমিশনের বিদায় বেলায় আমাদের অনুরোধ তারা তাদের কলঙ্কের বোঝা যেন আর না বাড়ায়।

সোমবার বেলা সোয়া ১১টায় নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ অনুরোধ জানান রিজভী।

তিনি বলেন, গত পাঁচটি বছর রক্ত নিংড়ানো সহিংস তাণ্ডবের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর কথা দিয়ে চিড়া ভেজাতে চেয়েছেন নির্বাচন কমিশনের প্রধান। কিন্তু কমিশনের এটা জেনে রাখা উচিত, কথা দিয়ে চিড়া হয়তো ভিজতেও পারে কিন্তু মানুষের মন ভিজবে না।

রিজভী বলেন, তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো দেশে-বিদেশে সর্বত্র কলঙ্কিত নির্বাচন হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে আছে, কোথাও ন্যুনতম গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। সুতরাং কমিশনের অধীনে কমপক্ষে শেষ নির্বাচনটি যেন সুষ্ঠু, অবাধ ও ভয়ভীতিমুক্ত হয় সেই উদ্যোগই কমিশনের গ্রহণ করা উচিত বলে জনগণ মনে করে।

দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির এই নেতা বলেন, বর্তমান পরিবেশকে আরো শান্তিপূর্ণ করে নির্বাচনের দিন সারাদিন পর্যন্ত তা প্রসারিত করবেন। নির্বাচন কমিশন শেষ মুহূর্তে এমন আচরণ যেন না করে যা ‘বাড়াভাতে ছাই’ এর মতো না হয়।

ক্ষোভ প্রকাশ করে রিজভী বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে আর মাত্র দুই দিন বাকী। নির্বাচন ঘিরে শেষ মুহূর্তে যুবলীগ-ছাত্রলীগ ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। নাসিক নির্বাচনকে ভয়ভীতিমুক্ত, সুষ্ঠু ও অবাধ করতে সকল দাবি নির্বাচন কমিশন কর্তৃক উপেক্ষিত হওয়ার কারণেই সন্ত্রাসীদের ক্রমাগত দৌরাত্ম বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে গণজোয়ারে ভীত হয়েই সরকারি দলের ক্যাডারদের পদচারণা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

তিনি মনে করেন, এই সরকারের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নির্বাচন পুরোনো চেহারায় ফিরে যায় কিনা সেই সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। কারণ তাদের ঐতিহ্যই হলো-ভোট ডাকাতি, ব্যালট ছিনতাই করে ধানক্ষেতে-খালে-বিলে ফেলা, জালভোট প্রদান, ভোটের আগের রাতে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার মাধ্যমে ভোটারদেরকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধাদান ইত্যাদি।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে লাশের পাহাড় ডিঙিয়ে মানুষের অধিকার হরণই আওয়ামী লীগের নিজস্ব শিক্ষা ও সংস্কৃতি। সুতরাং নাসিক নির্বাচনের মাঠে শাসকদলের কর্মী ও ক্যাডারদের ব্যাপক আনাগোনা তাদের পূর্ব পরিকল্পনার অংশ কিনা তা নিয়ে সংশয় উঁকি দিচ্ছে। আমরা আগেও বলেছি-দেশবাসীর কাছে নারায়ণগঞ্জ একটি সন্ত্রাস নিমজ্জিত এলাকা হিসেবে পরিচিত। অথচ জোরালো দাবি সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন বৈধ-অবৈধ অস্ত্রের বিশাল ভাণ্ডার শাসকদলের হাতে মজুদ রেখে কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করবে সেটিও এখন জনমানসে নানা প্রশ্নের দেখা দিচ্ছে।

তিনি জানান, সংবাদপত্রে প্রকাশিত মোট ১৭৪টি ভোটকেন্দ্রের সবগুলি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও ১৩৭টি অতি স্পর্শকাতর ও অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। তবে আমাদের নিজস্ব তথ্য অনুযায়ী এই সংখ্যা আরো বেশী। সহিংস সন্ত্রাসময় পরিস্থিতি এড়াতে স্থানীয় প্রশাসনের কোন ধরনের তৎপরতা নেই এবং নির্বাচন কমিশনও এ বিষয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পরিস্থিতি যদি এরকমই হয়, তাহলে যে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের অঙ্গীকার নির্বাচন কমিশন করেছে তার আলামত কই?

(ওএস/এএস/ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬)