রূপক মুখার্জি, লোহাগড়া(নড়াইল)  :নড়াইল জেলাসহ ৪টি থানা এলাকায় সরিষা ক্ষেতে মধুর চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। চলতি বছরে জেলায় সরিষাক্ষেতে মধু চাষের জন্য ১৩টি খামার গড়ে তোলা হয়েছে। বড় ধরণের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এ বছর জেলায় রবি শষ্য সরিষার যেমন বাম্পার ফলন হবে, তেমনি ক্ষেতের মধু বিক্রি করে এ অঞ্চলের কৃষকেরা লাভবান হবেন। তবে স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, সরিষা ক্ষেতে মধু চাষের জন্য সরকারীভাবে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি , প্রয়োজনীয় পুঁজির যোগান, আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার এবং আহরিত মধু বিপননের ব্যবস্থা করতে পারলে এ অঞ্চলে মধু চাষে আরো বেশী সাফল্য পাওয়া যেতে পারে।

সরিষা ক্ষেতে মৌ খামার করে মধু চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। কালিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কবির বিশ্বাস বলেন, ‘সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি থাকলে তা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ফলন বাড়ে। কারন হিসেবে তিনি জানান, মৌমাছি সরিষার ফুলে যে পরাগায়ন ঘটায় তাতে সরিষার দানা ভালো হয় এবং ফলনও বাড়ে। যে সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি থাকে না সে ক্ষেতে সরিষার ফলনও কম হয়। এ বছর নড়াইল জেলার ৪টি থানা এলাকায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। ’

এ বছর কৃষি বিভাগের সহযোগীতায় কালিয়া উপজেলায় ১০টি মৌ খামারে ২ হাজারেরও বেশি মধু সংগ্রহের বাক্স গড়ে তুলেছেন কৃষকেরা। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, এ এলাকায় পূর্বে এভাবে মধু চাষের প্রচলণ ছিল না। গত বছর রোস্তম আলী নামে এক কৃষক সরিষা ক্ষেতে মধু চাষ করে লাভবান হয়েছেন। ওই খামার দেখে এলাকার অনেকেই মধু চাষে অনুপ্রাণিত এবং আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

নড়াইল সদর উপজেলার আখদিয়া গ্রামের কৃষক সমশের আলী বলেন, ‘উপজেলার আউড়িয়া ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের আকবর শেখের কাছ থেকে মৌ খামারের উপর প্রশিক্ষন নিয়ে নিজের সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌ খামারের ১৫টি বাক্স স্থাপন করেছি। গত বছর ১২ হাজার টাকার মধু বিক্রি করেছিলাম। আমার দেখাদেখি এলাকার অনেক কৃষক সরিষা ক্ষেতে মৌ খামার গড়ে তুলছে। ’

লোহাগড়া উপজেলার নলদী ইউনিয়নের দড়ি মিঠাপুর গ্রামের কৃষক ইদ্রিস আলী বলেন,‘৪ বছর ধরে তিনি তার সরিষা ক্ষেতের পাশে ২৫টি মৌ বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করে আসছেন। গত বছর তিনি ক্ষেত থেকে বাড়তি ২৮ হাজার টাকার মধু বিক্রি করেছেন। এ বছরও মৌ খামার থেকে মধু বিক্রি করে লাভবান হবেন বলে তিনি আশা করছেন। ’

নড়াইল কৃষি অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আমিনুল ইসলাম দৈনিক জাতীয় অর্থনীতিকে বলেন, ‘জেলার ৪টি থানা এলাকায় যে পরিমাণ জমিতে সরিষার চাষ হয়ে থাকে তার অর্ধেক চাষ হয় লোহাগড়া উপজেলায় । একযুগ আগে থেকেই লোহাগড়া উপজেলায় সরিষা ক্ষেতে মধু সংগ্রহের কাজ চলছে। এখানকার কৃষকদের মধু চাষের সাফল্য দেখে জেলার অন্য এলাকার কৃষকেরা মধু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তবে সরিষা ক্ষেতে মধু চাষের সরকারীভাবে পুঁজির যোগান জরুরী হয়ে পড়েছে। বিষয়টি কৃষি বিভাগের উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আগামীতে সরিষা ক্ষেতে মধু চাষের জন্য কৃষকদের প্রণোদনা কর্মসূচী হাতে নেওয়া হতে পারে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।’









(আরএম/এস/ডিসেম্বর ২১, ২০১৬)