ফরিদুল ইসলাম(রঞ্জু),ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁও চিনিকলের এক শ্রমিক নেতা সম্প্রতি নির্বাচিত হয়েই আখ চাষিদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রেসমাড(আখের ময়লা) নিয়ে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য শুরু করেছে। তারা চাষীদের নাম করে কয়েকশ’ টন প্রেসমাড নামমাত্র দামে কিনে অন্যত্র কয়েল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বেশি দামে  বিক্রি করছে। ফলে বিপুল পরিমাণ আর্থিক লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চিনিকল।

প্রতি মৌসুমে আখ মাড়াইয়ের পর ঠাকুরগাঁও চিনিকলের কয়েকশ’ টন আখের উচ্ছিষ্ট প্রেসমাড বের হয়। এই প্রেসমাড জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করে। জৈব সার হিসেবে জমিতে ব্যবহার হয়। আখসহ অন্য যে কোন ফসলের ফলন বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত কার্যকর এই প্রেসমাড । এছাড়া উন্নতমানের জ্বালানি ও কয়েল তৈরির কাঁচামাল হিসেবেও এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।

প্রতি বছর এই প্রেসমাডের কিছু অংশ চিনিকলের কৃষি বিভাগ নিজস্ব খামারে ব্যবহার করে। বাকি প্রেসমাড সার হিসাবে শুধুমাত্র আখ চাষের জন্য চাহিদা অনুযায়ী তালিকাভুক্ত আখ চাষিদের কাছে প্রতি ট্রলি মাত্র ৫শ’ টাকা হারে রশিদ মূলে বিক্রি করেন। কিন্তু গত কয়েক বছর অধিকাংশ কৃষক এ সার ব্যবহার করছেন না। তারা এই প্রেসমাড উত্তোলনও করেন না। চলতি মৌসুমে বিভিন্ন বেসরকারি খামারি এই প্রেসমাড প্রতি ট্রলি ১৪-১৫শ’ টাকা হারে কেনার আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তু স্থানীয় একটি স্বার্থান্বেষী মহল নিজেরাই আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য কৌশলের আশ্রয় নেয়। তারা কোটি টাকার বাণিজ্য করার জন্য সরাসরি বেসরকারি খামারি বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বেশি দামে প্রেসমাড বিক্রি ঠেকিয়ে দেয় ও কৃষকের নামে প্রতি ট্রলি ৫০০ টাকা দরে বিক্রির স্লিপ ইস্যু করায়।

এই স্বার্থন্বেসী লোকজন কৃষককে একশ টাকা মুনাফা দিয়ে স্লিপ কিনে নিচ্ছে। অথবা সাকুল্যে ৬০০ টাকা হারে প্রতি ট্রলি প্রেসমাড কিনে নিচ্ছে। তারা ইতিমধ্যে শতাধিক কৃষকের কাছ থেকে স্লিপ কিনে চিনিকল থেকে প্রেসমাড উত্তোলন করে বিভিন্নস্থানে মজুত করছে।

বিসিক শিল্প নগরীর দক্ষিণ পার্শে এক ফাঁকা জায়গায় এমনি এক মজুদ গড়ে তুলেছে ঐ মহল। এখান থেকে তারা বেসরকারি খামারিদের কাছে ২/৩ গুণ দামে বিক্রি করছে প্রেসমাড ।

খামারিগণ চিনিকল থেকে সরাসরি প্রেসমাড কিনতে না পেরে বাধ্য হয়ে বেশি দামে বাইরে থেকে চিনিকলেরই এই প্রেসমাড কিনছে ও ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চিনিকলের কয়েক কর্মচারী জানায়, এ কাজে সম্প্রতি নির্বাচিত কেন্দ্রীয় আখচাষী সমিতির কতিপয় নেতৃবৃন্দ জড়িত রয়েছেন।

এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় আখচাষী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তোজাম্মেল হক বলেন, চিনিকলের প্রেসমাড ক্রয় করে হয়তো কৃষকের পোষায় না, সেজন্যই অধিকাংশ কৃষক তা উত্তোলন করেন না। তবে এই প্রেসমাডের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বেসরকারি খামারে। এই প্রেসমাড এভাবে নষ্ট না করে বাইরে বিক্রি করলে চিনিকলের অনেক লাভ হতো।

কৃষকের জন্য বরাদ্দকৃত প্রেসমাড বাইরে কেনা বেচায় কেন্দ্রীয় আখচাষী সমিতির নেতৃবৃন্দ জড়িত আছেন কিনা-এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে যান ও দ্রুত স্থানত্যাগ করেন।

এ ব্যাপারে চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এনায়েত হোসেন জানান, কৃষকের জন্য বরাদ্দকৃত প্রেসমাড অন্যত্র বিক্রির অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। তদন্ত করে প্রয়োনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও তিনি জানান।









(এফআইআর/এস/ডিসেম্বর ২২, ২০১৬)