প্রবীর সিকদার


পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি। ওই স্বরূপকাঠিতেই শর্ষীনা পীরের আস্তানা। ওই আস্তানায় একাত্তরে গদিনসিন পীর ছিলেন সৈয়দ আবু জাফর সালেহ। একাত্তরে তিনি শুধু মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাই করেননি, পাক সেনাদের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়ে  ফতোয়া দিয়ে হিন্দু নারীদের 'মালে গনিমত' আখ্যা দিয়েছিলেন এবং পাকসেনা ও রাজাকারদের হিন্দু নারী ভোগ করবার নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

আমাদের চরম দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতা বিরোধী সেই শর্ষীনা পীরকে রাষ্ট্রীয় সম্মান 'স্বাধীনতা পদক' দেওয়া হয়েছে। ১৯৮০ সালে স্বাধীনতা বিরোধী ওই শর্ষীনা পীর সৈয়দ আবু জাফর সালেহকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করেছিলেন তৎকালীন স্বৈর শাসক ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নাটের গুরু জে. জিয়া।

সেখানেই শেষ নয়। ১৯৮৮ সালে আরেক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ স্বরূপকাঠিতে শর্ষীনা পীরের মাহফিলে গিয়েছিলেন। ওই সময় পীর সৈয়দ আবু জাফর সালেহ এরশাদের কাছে 'রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম' করবার আবদার করেন। এরশাদ কালবিলম্ব না করে ওই মাহফিলেই পীর সাহেবের দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেন। ওই বছরেই সংবিধান সংশোধন করে 'রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম' সংযোজন করা হয়, যা এখন আমাদের সংবিধানের অংশ। এরশাদ আরও একধাপ এগিয়ে ঐতিহ্যবাহী স্বরূপকাঠির নাম পাল্টে করেন 'নেছারাবাদ'। শর্ষীনা পীর সৈয়দ আবু জাফরের পিতা নেছারউদ্দিনের নামেই হয় ওই 'নেছারাবাদ'। মানুষের মুখে মুখে এলাকার নাম স্বরূপকাঠি থাকলেও কাগজে-কলমে সেটি এখন নেছারাবাদ।

দীর্ঘ সময়ের পথপরিক্রমায় আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকার প্রধান। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, হচ্ছে ফাঁসিও। অথচ এখনো বহাল চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধী শর্ষীনা পীর সৈয়দ আবু জাফর সালেহর স্বাধীনতা পদক! বহাল রয়েছে স্বাধীনতা বিরোধীর বাবার নাম নেছারাবাদ! মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সন্তান হিসেবে আমি বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি করছি, অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক চিহ্নিত ও কুখ্যাত স্বাধীনতা বিরোধী শর্ষীনা পীরের স্বাধীনতা পদক। সেই সাথে স্বাধীনতা বিরোধীর বাবার নাম ধুয়ে মুছে স্বরূপকাঠি ফিরে আসুক স্বমহিমায়। আর সেটি যেন করা হয় এই বিজয়ের মাস ডিসেম্বরেই।

(ওএস/এএস/ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬)