বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটে পরিত্যাক্ত নারকেলের খুলি বা আচাঁ বিশ্ব জয় করেছে। দেশ আয় করছে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা। বাগেরহাটের এক সময়ের পরিত্যাক্ত নারকেলের আচাঁ দিয়ে তৈরি গহনাসহ বিভিন্ন দ্রব্য এখন রপ্তানী হচ্ছে এশিয়া, আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। হাতে তৈরি এসব পন্য বিশ্ব বাজার জয়ের পাশাপাশি কর্মস্থান হচ্ছে অনেক নারীর। নারকেলের উচ্ছিষ্ট আচাঁ দিয়ে তৈরি এসব রপ্তানি পন্য তৈরিতে নারী উদ্যোক্তারা সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে একদিকে দরিদ্র নারীদের পাশাপাশি দেশের আয় হবে আরও বৈদেশিক মুদ্রা।

বাগেরহাটের বিসিক শিল্প নগরীতে ২০১১ সালে নুরজাহান এগ্রো প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী বিভিন্ন পন্য সামগ্রী উৎপাদনের পাশাপাশি ‘কোকো সেল বাটন ইউনিট’ নামে পরিত্যাক্ত নারকেলের আচাঁ দিয়ে বোতাম তৈরির কাজ শুরু করে। দেশ বিদেশে ওই নারকেলের আচাঁর বোতামের চাহিদা বাড়ায় বোতামের পাশাপাশি নারকেলের আচাঁ দিয়ে বিভিন্ন জুয়েলারী সাগ্রমীসহ বিভিন্ন পন্য উৎপাদন শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। দিন দিন চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার জুয়েলারী পন্য সামগ্রী চুড়ি, কানের দুল, হার, কোমরের বিছা, হ্যান্ডব্যাগ, পার্টসব্যাগ, বোতাম, ওয়ালম্যাট, টেবিলসহ বিভিন্ন সোপিচ তৈরি করছে। এই কারখানায় ২৫ থেকে ৩০ জন দরিদ্র নারী শ্রমিক নিজ হাতে তৈরি করছেন এসব পন্য। প্রতিদিন একজন নারী শ্রমিক ২ থেকে আড়াই শত টাকা পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। কোকো সেল বাটন ইউনিটে স্থানীয় অসহায় দরিদ্র নারীদের প্রশিক্ষন দিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে পন্য তৈরি করায় যেমন সৃষ্টি হয়েছে কর্মস্থান হয়েছে তেমনি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভুমিকা রাখছে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে নারকেলের আচাঁ দিয়ে তৈরি পন্য এখন রপ্তানি হচ্ছে আমেরিকা, লন্ডন, কোরিয়ায়সহ বিভিন্ন দেশে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই অপ্রচলিত শিল্প থেকে একদিকে যেমন দরিদ্র নারীদের কর্মসংস্থান বাড়বে অন্যদিকে আয় হবে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা। এদিকে এই পন্য তৈরি করে খুশি নারী শ্রমিকরা।

বাগেরহাট কোকো সেল বাটন ইউনিট ইনচার্জ ও নারী উদ্যোক্তারা আনোয়ারা মনজু বলেন, নারিকেলের আচাঁ এর একটা বিরাট সম্ভবনা দিক রয়েছে। এই পরিত্যাক্ত আচাঁ দিয়ে আমরা দরিদ্র নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নানা প্রকার গহনা তৈরী করছি। এতে একদিকে অসহায় নারীদের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে বৈদেশীক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানের তৈরী জুয়েলারী আমেরিকা, লন্ডন ও উত্তর কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ব্যাপক চাহিদা আছে এবং বাজারজাত করা হচ্ছে। বিশ^বাজারে এই অপ্রচলিত পন্যের শিল্প সামগ্রির বিপুল চাহিদা থাকায় ভবিষাতে অন্যদেশ গুলোতে আমরা বাজারজাত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

বাগেরহাট বিসিক শিল্প নগরী কর্মকর্তা কৃষ্ণ পদ মল্লিক বলেন, নারিকেলের আচাঁ এক সময় মানুষ ফেলে দিত। এখন এটা মুল্যেবান সম্পদে পরিনত হয়েছে। তা এখন সংগ্রহ করে মহিলা উদ্যোত্তরা বিভিন্ন ধরনের বুতাম, অলংকার, ওয়ালমেট, পার্টস ব্যাগ তৈরি করে সুনাম অর্জন করেছে। এদের মত যদি অন্য উদ্যোত্তরা এগিয়ে আসে তাহলে এই শিল্প থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

(একে/এএস/ডিসেম্বর ২৬, ২০১৬)