মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আজ আপনার সভাপতিত্বে মন্ত্রীপরিষদের সভায় জিয়ানগরের নাম বাতিল করে সাবেক নাম ইন্দুরকানি বহাল করা হয়েছে। মন্ত্রী পরিষদের এই সিদ্ধান্তে আমার বুকের ওপর চেপে থাকা যন্ত্রণার এক জগদ্দল পাথর মুহূর্তে সরে গেল। এ বিজয় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল মানুষের। স্যালুট বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আপনাকে ও আপনার সরকারকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এবার আমি তথা দেশের মানুষ আশায় বুক বেঁধে আছি , নেছারাবাদের নাম বাতিল করে আপনি অবশ্যই বহাল করবেন ঐতিহ্যবাহী সাবেক নাম স্বরূপকাঠি।

পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি। ওই স্বরূপকাঠিতেই শর্ষীনা পীরের আস্তানা। ওই আস্তানায় একাত্তরে গদিনসিন পীর ছিলেন সৈয়দ আবু জাফর সালেহ। একাত্তরে তিনি শুধু মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাই করেননি, পাক সেনাদের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়ে ফতোয়া দিয়ে হিন্দু নারীদের 'মালে গনিমত' আখ্যা দিয়েছিলেন এবং পাকসেনা ও রাজাকারদের হিন্দু নারী ভোগ করবার নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

আমাদের চরম দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতা বিরোধী সেই শর্ষীনা পীরকে রাষ্ট্রীয় সম্মান 'স্বাধীনতা পদক' দেওয়া হয়েছে। ১৯৮০ সালে স্বাধীনতা বিরোধী ওই শর্ষীনা পীর সৈয়দ আবু জাফর সালেহকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করেছিলেন তৎকালীন স্বৈর শাসক ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নাটের গুরু জে. জিয়া।

সেখানেই শেষ নয়। ১৯৮৮ সালে আরেক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ স্বরূপকাঠিতে শর্ষীনা পীরের মাহফিলে গিয়েছিলেন। ওই সময় পীর সৈয়দ আবু জাফর সালেহ এরশাদের কাছে 'রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম' করবার আবদার করেন। এরশাদ কালবিলম্ব না করে ওই মাহফিলেই পীর সাহেবের দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেন। ওই বছরেই সংবিধান সংশোধন করে 'রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম' সংযোজন করা হয়, যা এখন আমাদের সংবিধানের অংশ। এরশাদ আরও একধাপ এগিয়ে ঐতিহ্যবাহী স্বরূপকাঠির নাম পাল্টে করেন 'নেছারাবাদ'। শর্ষীনা পীর সৈয়দ আবু জাফরের পিতা নেছারউদ্দিনের নামেই হয় ওই 'নেছারাবাদ'। মানুষের মুখে মুখে এলাকার নাম স্বরূপকাঠি থাকলেও কাগজে-কলমে সেটি এখন নেছারাবাদ।

দীর্ঘ সময়ের পথপরিক্রমায় আজ বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে আপনিই সরকার প্রধান। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, হচ্ছে ফাঁসিও। অথচ এখনো বহাল চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধী শর্ষীনা পীর সৈয়দ আবু জাফর সালেহর স্বাধীনতা পদক! বহাল রয়েছে স্বাধীনতা বিরোধীর বাবার নাম নেছারাবাদ! মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সন্তান হিসেবে আমি আপনার কাছে দাবি করছি, অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক চিহ্নিত ও কুখ্যাত স্বাধীনতা বিরোধী শর্ষীনা পীরের স্বাধীনতা পদক। সেই সাথে স্বাধীনতা বিরোধীর বাবার নাম ধুয়ে মুছে স্বরূপকাঠি ফিরে আসুক স্বমহিমায়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি গভীর প্রত্যয় নিয়েই বলতে পারি, আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই স্বাধীনতা বিরোধী শর্ষীনা পীরের স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহার করা হবে এবং নেছারাবাদ বাতিল করে পুনর্বহাল করা হবে সাবেক নাম স্বরূপকাঠি।

লেখক : প্রবীর সিকদার, সম্পাদক, দৈনিক বাংলা ৭১ ও উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ।

(পিএস/এএস/জানুয়ারি ০৯, ২০১৭)