চাটমোহর (পাবন) প্রতিনিধি :পাবনার চাটমোহর পৌরসভা সংলগ্ন উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের ভাদুনগর এলাকায় অবস্থিত বন্ধন ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল অপারেশনে প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনা মঙ্গলবারের ।

মৃত প্রসূতি হলেন নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার তালসু গ্রামের রুবেল হোসেনের স্ত্রী ও চাটমোহর উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের বাঙ্গালা গ্রামের কিসমত মোল্লার মেয়ে খুশী খাতুন (২৫)। এ সময় মৃতর স্বজন ও বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ক্লিনিকের সামনে জড়ো হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচার দাবি করেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। তবে ক্লিনিক পরিচালক ডাঃ এম এ মজিদ দাবি করে বলেন ‘খুশী খাতুন হার্ট এ্যাটাকে মারা গেছেন।

জানা গেছে, মঙ্গলবার প্রসূতি খুশী খাতুনকে বন্ধন ক্লিনিকে নিয়ে আসে তার স্বজনরা। ক্লিনিকটির পরিচালক ডাঃ এম এ মজিদ সিজারের পরামর্শ দিয়ে ভর্তি করেন। বিকেলে পাবনার একজন ডাক্তারকে নিয়ে অপারেশন শুরু করেন। প্রসূতিকে সিজার করে পর একটি কন্যা সন্তান হয়। কিছুক্ষণ পরে অপারেশন থিয়েটারেই মারা যান খুশী খাতুন। তবে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে খুশী খাতুনকে রাজশাহী নিয়ে যেতে হবে বলে তার স্বজনদেরকে জানান ডাঃ এম এ মজিদ। পরে খুশী খাতুন মারা গেছে অন্য রোগীদের মাধ্যমে তার স্বজনরা টের পেলে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে ডাঃ মজিদ নিহত গৃহবধূর স্বজনদের ম্যানেজ করে ফেলেন মোটা টাকা বিনিময়ে। অপরদিকে কৌশলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন অপারেশন করা দুই ডাক্তার।

পরে এলাকাবাসী ও বিক্ষুব্ধ স্বজনরা জড়ো হতে থাকলে অবস্থা বেগতিক দেখে ক্লিনিক পরিচালক ডা. আব্দুল মজিদ এক ইউপি সদস্য এবং কয়েকজন ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধির মাধ্যমে খুশীর পরিবারকে দফায় দফায় সমঝোতা বৈঠকে বসেন। পরবর্তীতে খুশীর জীবনের মূল্য এক লাখ টাকা নির্ধারণ করে বিষয়টি ম্যানেজ হয়ে যায়।

খুশীর মা হালিমা খাতুন সাংবাদিকদের জানান, ‘সুস্থ অবস্থায় আমার মেয়েকে মঙ্গলবার চেকআপের জন্য ডাঃ আব্দুল মজিদের মালিকানাধীন বন্ধন ক্লিনিকে নিয়ে আসি। মেয়েটিকে দেখে শুনে ডাঃ আব্দুল মজিদ জানান, খুশীর শরীরে পানি শূণ্যতা রয়েছে। সন্তান থলী পানি শুন্য হয়ে পড়েছে, দ্রুত সিজার করাতে হবে। খুশীর সিজার করে গিয়ে তার মৃত্যু হয়। এখন মজিদ ডাক্তার বলছে হার্ট এ্যাটাকে আমার মেয়ে মারা গেছে। আমার মেয়ের হার্টের কোন সমস্যাই ছিলনা।’

ক্লিনিকটির মালিক ডাঃ এম এ মজিদ জানান, ‘এ্যনেসথেসিয়া ডাঃ আব্দুস সাত্তার মেয়েটিকে অজ্ঞান করে এবং সার্জন ডাঃ মাজেদ অস্ত্রপোচার করে। সন্তানটি ভূমিষ্ট হওয়ার পর পরই হার্ট এ্যাটাকে খুশীর মৃত্যু হয়।’

ভুল চিকিৎসায় খুশির মৃত্যুর খবর চারদিকে ছড়িয়ে পরলে শ’ শ’ মানুষ ক্লিনিকটিতে ভীড় জমায়। এসময় খুশীর লাশ অপারেশন থিয়েটারেই রাখা হয়। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে রোগির স্বজনদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। সূত্র মতে লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে রোগির স্বজনদের সাথে আপোষ মিমাংসাও করা হয় বলে জানা গেছে।

আপোষ মিমাংসার পূর্বে খুশীর মা ও স্বামী এ মৃত্যুর জন্য ক্লিনিক কর্তৃৃপক্ষকে দায়ী করে বিচার দাবি করলেও আপোষ মিমাংসার পর খুশীর পিতা ও শ্বশুর সবাইকে জানায় এ ব্যাপারে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন দাবি দাওয়া নেই। সন্ধ্যার পর খুশীর লাশ নিয়ে তারা চলে যান। সূত্র মতে লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে রোগির স্বজনদের সাথে আপোষ মিমাংসা করেছে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার পর এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।

প্রসঙ্গত, ইতোপূর্বে চাটমোহর বাসস্ট্যান্ডে থাকাকালে এই বন্ধন ক্লিনিকে আরো ২টি প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ক্লিনিকের মালিক ডাঃ এম এ মজিদ প্রত্যেক বারই মোটা টাকার বিনিময়ে মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দেন। এবারও এর ব্যতয় ঘটেনি। মৃত্যুর মিছিলে যোগ হলো আরো একজন প্রসূতির।








(এসএইচএম/এস/জানুয়ারি ১২, ২০১৭)