শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শামীম শিকদার (৩৫) নামে এক ইউরোপ প্রবাসীকে ধরে নিয়ে যায় মাদারীপুর র‌্যাব-৮। প্রথমে র‌্যাবের পক্ষ থেকে তাকে ধরে নেয়ার ঘটনা অস্বীকার করলেও ৫ ঘন্টা পরে তার বিরুদ্ধে র‌্যাবের গায়ে হাত তোলা, ইয়াবা ব্যবসা ও জাল টাকা উদ্ধার করার অভিযোগ এনে প্রেস রিলিজ প্রচার করে। শুক্রবার ভোর ৫টায় শামীম শিকদারকে পালং মডেল থানায় সোপর্দ করেন।     

ঘটনার বিবরণ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার সময় শরীয়তপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে বাংলাশে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পারভেজ রহমান জনকে বহনকারী একটি অটোবাইককে ধাক্কা দেয় মোটরসাইকেল আরোহী সাদা পোশাকের তিন র‌্যাব সদস্য। এ ঘটনায় প্রথমে অটোবাইক চালকের সাথে র‌্যাব সদস্যদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে এ্যাডভোকেট পারভেজ রহমান জনও তাদের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। জনকে র‌্যাব সদস্যরা হুমকি দিতে থাকলে পথচারী শামীম শিকদার এর প্রতিবাদ জানায়। ঘটনার প্রায় ৩ ঘন্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার সময় শরীয়তপুর শহরের রাজগঞ্জ ব্রীজ থেকে শামীম শিকদারকে র‌্যাব পরিচয় দিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায়। বিষয়টি শামীম শিকদারের পরিবার জানার পর বিভিন্ন ভাবে তাকে খুজতে থাকে। রাত ১০ টার দিকে শরীয়তপুরের গণমাধ্যম কর্মীরা র‌্যাব-৮ মাদারীপুর অঞ্চলের কোম্পানি কমান্ডার মেজর সোহেল রানার কাছে জানতে চাইলে তিনি শামীমকে তুলে নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। এর কিছুক্ষণ পর রাত সাড়ে ১০ টার দিকে র‌্যাব-৮ এর এক সংবাদ বিবরনীতে জানানো হয় শরীয়তপুর পালং থাকা এলাকা থেকে শামীমকে জাল টাকা ও ইবাবা সহ আটক করা হয়। পরবর্তীতে রাত দেড় টায় শামীমের পরিবারের সদস্যরা মাদারীপুর র‌্যাব-৮ এর কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পায় শামীম শিকদার সেখানে আটক আছে। এদিকে শামীম শিকদারের খোজ করে না পাওয়ায় এ্যাডভোকেট পারভেজ রহমান জন বৃহস্পতিবার রাতে পালং মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।

পরে র‌্যাব-৮ শুক্রবার ভোর ৫টার সময় র‌্যাবের গায়ে হাত তোলা, ইয়াবা ব্যবসা ও জাল টাকা ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করে শামীমকে থানায় সোপর্দ করেন।

শামীমের পারিবাকির সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালে শামীম শিকদার কর্মের উদ্দেশ্যে স্পেন চলে যায়। কর্মের ফাকে সে বাড়িতে আসা যাওয়া করে। গত দেড় মাস আগে সে বাড়ি আসে এবং আগামী ২৫ এপ্রিল আবার স্পেন চলে যাওয়ার কথা ছিল তার।

এ্যাডভোকেট পারভেজ রহমান জন বলেন, আমাকে বহনকারী অটোবাইকের পেছন থেকে ধাক্কা দেয় সাদা পোশাকে র‌্যাবের তিনজন আরোহী। পরে এ নিয়ে আমার সাথে তাদের কথা কাটাকাটি হলে পথচারী শামীম শিকদার প্রতিবাদ করে। সেখানে হাতাহাতির কোন ঘটনা ঘটেনে। বিষয়টি সেখানেই মিমাংসা হয়ে যায়। পরে জানতে পারি শামীমকে কারা যেন তুলে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে আমি থানায় সাধারণ ডায়েরী দায়ের করি। পরে জানতে পারি র‌্যাব-৮ ইয়াবা ও জাল টাকা সহ শামীমকে পালং মডেল থানায় সোপর্দ করে মামলা দিয়েছে।

শামীম শিকদারের বড় ভাই স্কুল শিক্ষক খলিলুর রহমান শিকদার বলেন, আমার ভাই রুটি রোজগারের জন্য ১৫ বছর আগে স্পেনে পাড়ি জমায়। গত ডিসেম্বরের ৬ তারিখে সে বাড়ি আসে। আমার ভাই একজন নিরীহ মানুষ। একজন আইনজীবীর সাথে র‌্যাব সদস্যদের খারাপ আচরনের প্রতিবাদ জানানোয় র‌্যাব তাকে আটক করে বেদম ভাবে মারপিট করে তুলে নিয়ে গিয়ে মিথ্যা মামলায় জড়ায়। আমার ভাই ইউরোপে থাকে, সে কখনোই ইয়াবা বা জাল টাকা ব্যবসার সাথে জড়িত নয়। আমি এ নির্যাতনের বিচার দাবি করছি।

এ ব্যাপারে র‌্যাব-৮ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর সোহেল রানার সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে শরীয়তপুর শহরে শামীম সিকদার নামে এক লোক র‌্যাবের পরিচয় পাওয়ার পরেও সে র‌্যাব সদস্যদের গায়ে হাত তোলে। এ বিষয়টি আমার উর্ধ্বতন মহলে জানাজানি হয়। পরবর্তীতে র্যাাবের কয়েকটি টিম শরীয়তপুর শহরে মুভ করে। কিন্তু মাদারীপুর ক্যাম্পের র‌্যাব সদস্যরা তাকে আটক করেনি। এরপর শামীমকে আটক করার সংবাদ বিবরনী প্রকাশের কিছুক্ষন পর আবার তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন জাল টাকা ও ইয়াবা সহ শামীম শিকদার নামে এক যুবককে বৃহস্পতিবার পালং থানা এলাকা থেকে আটক করা হয়।

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. খলিলুর রহমান বলেন, আমি পরস্পর জানতে পারি বৃহস্পতিবার বিকালে শামীম শিকদার নামে একজনকে সাদা পোশাকধারী লোকেরা রাজগঞ্জ ব্রীজ এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে র‌্যাব সদস্যরা তাকে আটক করেছে বলে জানতে পারি। শুক্রবার ভোর ৫টার সময় শামীম শিকদারকে জাল টাকা ও ইয়াবা বহন এবং সরকারী কর্মচারীদের গায়ে হাত তোলার অপরাধে একটি মামলা দিয়ে থানায় সোপর্দ করে। তার ব্যাপারে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রস্তুতি চলছে।

(কেএনআই/এএস/জানুয়ারি ২০,২০১৭)