বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটে মানসম্মত রেণু পোনার অভাবে গলদা চিংড়ি চাষীরা কাংক্ষিত উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রাকৃতিক উৎস থেকে রেণু পোনা আহরণ বন্ধ থাকার কারনে হ্যাচারীর অপুষ্ট রেণু পোনা চাষ করে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন চাষীরা। এদিকে মৎস্য বিভাগ বলছে, হ্যাচারীর গলদা রেণু (পোনা) উৎপাদন কম হওয়ায় চাষীরা সময় মত মৎস্য ঘেরে পোনা ছাড়তে না পারায় গলদার উৎপাদন কমছে। অন্যদিকে বিশ্ববাজারে রপ্তানীতে নতুন বাজার সৃষ্টি না হওয়ায় গলদার দাম কম পাচ্ছেন।

বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি পরিমানে গলদা চিংড়ির চাষ করা হয়। এসব এলাকার হাজার হাজার চিংড়ি চাষীদের প্রতি বছর ৫শ ৬০ কোটি গলদা রেনু পোনার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এই চাহিদার নুন্যতম সরবরাহ না থাকায় দিন দিন গলদা চাষীরা উৎপাদনে আগ্রহ হারাচ্ছেন। অন্যদিকে প্রাকৃতিক উৎস নদ নদী থেকে রেনু পোনা আহরন বন্ধ থাকায় এবং সরকারী ভাবে উৎপাদিত রেনু পোনা চাহিদা মেটাতে না পারায় বেসরকারী হ্যাচারী থেকে উৎপাদিত অপুষ্ট ও গুনগত মানহীন পোনা চাষ করে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন চাষীরা।

ফকিরহাট উপজেলার বানিয়াখালী গ্রামের গলদা চাষি প্রজিত বালা, বিধান বাগচীসহ একাধিক বলেন, প্রাকৃতিক উৎস্য থেকে আহরিত রেনুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, দীর্ঘদিন বাচেঁ, অনেক বড় হয় এবং গুনগত মানসম্মত হওয়ায় চাষে উৎপাদন ভালো হয়। কিন্তু হ্যাচারীর পোনার গুনগত মান খারাপ হওয়ায় ঘেরে গলদা মারা যায় এবং উৎপাদন ভালো হয় না। আমরা গুনগত মানসম্মত রেনুর অভাবে হ্যাচারীর পোনা চাষ করে ক্ষতির শিকার হয়েছি। প্রাকৃতিক উৎস নদ-নদী থেকে রেনু পোনা আহরন করতে পারলে চিংড়ির উৎপাদন বাড়বে এবং বেশি পরিমান বৈদিশক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে সরকারের কাছে দাবী জানান চাষীরা।
একই গ্রামের গুরু দেব বলেন, আমার চারটি গলদা ঘের রয়েছে। এবার লোন নিয়ে রেনু পোনা ছেড়ে চাষ করে পুজি উঠেনি। মাছ মরে গেছে, বন্যায় ভেসে গেছে সব মিলিয়ে আমার প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন কিভাবে ধার দেনা পরিশোধ করবো তা নিয়ে দূঃচিন্তায় রয়েছে।
ফকিরহাট রেনুপোনা বিক্রয় মালিক সমিতি সভাপতি মো. লিয়াকত হোসেন বলেন, এ অঞ্চলে প্রতি বছর ৪শ কোটি গলদা রেনু পোনা প্রয়োজন। সেখানে প্রতি বছর ২০ কোটি পোনা সরবরাহ করা হচ্ছে। বাকি পোনা নদী উৎস থেকে সংগ্রহ করতে নানা বাধার সম্মখিন হতে হয়। আমরা সরকারের কাছে দাবী জানাই গলদা চাষ টিকিয়ে রাখতে হলে প্রকৃতিক উৎস থেকে রেনু পোনা আহরনের বিকল্প নেই।

বাগেরহাট চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি মো. ফকির মহিদুল ইসলাম বলেন, এক দিকে বন্যার ক্ষতি অন্যদিকে মাছের দাম কম হওয়ায় চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। আমি মনে করি সরকারের নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করে চিংড়ি শিল্প তথা চাষিদের বাচিয়ে রাখা জরুরী। তা না হলে এ শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়বে।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.কবির হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাগেরহাট জেলায় ২১ হাজার হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার গলদা চিংড়ি ঘের (খামার) রয়েছে। এতে প্রায় ২৫ হাজার গলদা চাষী প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত। মানসম্মত রেনু পোনার অভাবে চাষিরা শিকার হচ্ছে বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, হ্যাচারিগুলো চাষিদের চাহিদা অনুযায়ী পোনা সরবারহ করতে পারছে না। অন্যদিকে সরকারি ভাবে নদী থেকে পোনা আহরন নিষিদ্ধ থাকায় চাষিরা চাহিদা অনুয়ায়ী পোনা পাচ্ছে না। এছাড়া বিভিন্ন অনিয়ম ও গলদা ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিদেমী বায়ারদের অনিহার কারনে উৎপাদিত এলাকার বাজারে গলদা চিংড়ির মূল্য মন্দা যাচ্ছে। এত ক্ষাতগ্রস্থ হচ্ছে খামারিরা।






















(একে/এস/জানুয়ারি ২৭, ২০১৭)