প্রবীর সিকদার


ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত ছাত্রলীগ ভিপি জিএসসহ সবগুলো পদেই জয়লাভ করেছে। প্রথম থেকেই যেমনটি আশঙ্কা করা হচ্ছিল ফল তেমনই হয়েছে। আওয়ামীলীগ ও কলেজ প্রশাসনের নানান বিতর্কিত কর্মকাণ্ড সেই আশঙ্কাকে উস্কে দিয়েছে, যার ফলে নির্বাচনটি হয়ে যায় একটি পাতানো খেলার মতো। কিন্তু মজার বিষয় হল, রাজেন্দ্র কলেজের বিরাট সংখক সাধারণ ছাত্রছাত্রী অনেকটাই ওই পাতানো নির্বাচন অঘোষিত ভাবেই বয়কট করে অভিনব এক প্রতিবাদ করেছে। ফরিদপুরে হাইব্রিড আওয়ামীলীগারদের দাপট ও স্থানীয় প্রশাসনের লেজুর বৃত্তির কারণে নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদের কোনও পথ খোলা না থাকায় সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থীদের ওই নীরব প্রতিবাদ অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। এই দুঃসাহস দেখানোর জন্য আমি অভিনন্দন জানাই কলেজটির বিবেকবান সকল ছাত্রছাত্রীকে।

সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ আমারও কলেজ। ওই কলেজে আমি পড়েছি। ওই কলেজ সংসদ নির্বাচনে আমিও ছাত্রলীগের প্রার্থী হয়ে দিন রাত জেগে ভোট প্রার্থনা করেছি। বিপুল ভোটে জয়লাভ করে কলেজ সংসদ পরিচালনায় ভূমিকাও রেখেছি। আমার নির্বাচন শুধু নয়, আমার আগে বা পরেও রাজেন্দ্র কলেজ সংসদ নির্বাচন খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। প্রতিটি নির্বাচনে উল্লাস মুখর পরিবেশে নির্ভয়ে ছাত্রছাত্রীরা ভোট দিয়েছে। সব সময় ভোটাধিকার প্রয়োগকারী ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা শতকরা ৭০ থেকে ৯০ ভাগ হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী রাজেন্দ্র কলেজের অবয়ব ও ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বর্তমানে বহুগুণে বেড়েছে। বেড়েছে কলেজটির গুরুত্বও। দীর্ঘ ১৩ বছর পর ওই কলেজে নির্বাচন হয়ে গেল গত ২৬ জানুয়ারি। ওই নির্বাচনে ব্যাপক সাড়া ও উৎসাহ-উদীপনা থাকবে সেটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু দুর্ভাগ্য সকলের, সেটা হয়নি। মোট ভোটার ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২৫,৩৪৫ জন হলেও ভোট দিয়েছে মাত্র ৮,২৯১ জন। যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, এবারের রাজেন্দ্র কলেজ সংসদ নির্বাচনে ভোট দিয়েছে শতকরা মাত্র ৩৩ জন। অবশ্য ছাত্রদলের পক্ষে বলা হয়েছে, যেভাবে তাদের কর্মী সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে, তাতে ভোট প্রয়োগকারী ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগের বেশী হবে না।

ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এবারকার কলেজ সংসদ নির্বাচনে বিবাহিতদের নেতৃত্বে রেখে ছাত্রলীগের প্যানেল ঘোষণা করায় ছাত্রলীগের নিবেদিত প্রাণ সাধারণ কর্মী সমর্থকেরা প্রথম থেকেই অভিমান করে দূরে সরে গিয়েছিলেন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল পূর্ণ প্যানেলে প্রার্থী দিলেও বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আওয়ামীলীগের হাইব্রিড নেতাদের তোষণ করে চলায় নির্বাচনী প্রচারে কোনও গতি ছিল না তাদের। ছাত্রদলের প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীরা অনেক বার অভিযোগ করেছেন, তাদের নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে, তাদের কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। কিন্তু কলেজ প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসন তাদের অভিযোগ আমলেই নেয়নি। ফলে যা হবার তাই হয়েছে ; পাতানো একটি নির্বাচন রাজেন্দ্র কলেজ ও কলেজ সংসদের ইতিহাসে কলংক তিলক হয়েই থাকবে।

(পিএস/এএস/জানুয়ারি ২৭, ২০১৭)