নিউজ ডেস্ক : ২০০২ সালের কথা। অনন্ত নামে বাংলাদেশের একজন ছাত্রের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল জাপানে। তার মুখেই একদিন এই ঘটনাটি শুনেছিলাম গ্রীষ্মের রাতে এক উদ্যানে বসে। অনন্ত ঢাকার ছেলে। অসহায় একটি মেয়ে অর্চনা ঘোষালকে উদ্ধারের সেও একজন সাক্ষী ছিল।

অনিমেষ চক্রবর্তী নামে একজনকে ভালোবাসতো অর্চনা। অনিমেষ ছিল মেধাবী এবং একটি সরকারি কলেজের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের প্রভাষক। আর অর্চনা কাজ করতো একটি বিদেশি এনজিওতে। তাদের এই সম্পর্কের কথা দুই পরিবারও জানতো। সাত বছরের সম্পর্ক। এরমধ্যে বিয়ের পাকাপাকি কথাবার্তাও চলছিল। তাই নির্ভার নিরাপদেই দৈহিক মিলনে মিলিত হয়েছে একাধিকবার দুজনে। এই যুগে এ আর এমনকী ব্যাপার! তা ছাড়া দুজনেই সুশিক্ষিত এবং প্রতিষ্ঠিত।

কিন্তু অর্চনা জানতো না তার বিধিলিপিতে কী লেখা ছিল! সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেল অনিমেষ চিরদিনের জন্য হঠাৎ করেই একদিন! ঘটনার আকস্মিকতায় অর্চনা তো বটেই দুই পরিবারের সদস্য সবাই মূক হয়ে গেল! আরও যখন জানাজানি হয়ে গেল অনিমেষের সন্তান অর্চনার পেটে তখন দুই পরিবারের অভিভাবকের মাথার চুল ছেঁড়ার উপক্রম হলো! দুটো আঘাতে অর্চনাসহ সবাই মুহ্যমান।

অর্চনার বাবা জাঁদরেল মুক্তিযোদ্ধা এবং আইনজীবী হয়েও একেবারে মুষড়ে পড়লেন। কী করবেন বুঝতেই পারছেন না। যদি পাড়ায়, শহরে জানাজানি হয়ে যায় লজ্জার সীমা থাকবে না! সবাই বলবে, ছি ছি বিয়ের আগেই সন্তান নিয়ে নিয়েছে আপনার মেয়ে! রক্ষণশীল হিন্দুসমাজ বলে কথা!

অনিমেষের পিতা-মাতাই বা কী করবেন! কীভাবে ঘরে তুলবেন অর্চনাকে? কোন রীতিতে? কোন বিচারে? মানুষই বা কী বলবে জানাজানি হলে পরে! এটা তো আমেরিকা, জাপান বা ব্রিটেন নয়!

কী করবে এখন অর্চনা? কোথায় যাবে সে? তার বড়মাসি অঞ্জলি ঘোষ বড় ডাক্তার, ঘটনা জানার পর বললেন, এই যুগে এ আর এমনকী ব্যাপার! হরহামেশা আমার হাসপাতালে নামানো হচ্ছে। কেউ জানবে না, বুঝতেই পারবে না আমি নামানোর ব্যবস্থা করে দেব। মাত্র তো তিন মাস চলছে, তাই না?

শুনে আঁতকে ওঠে অর্চনা: বলে কী! ভালোবাসার মানুষটার সন্তানকে ইঞ্জেকশন দিয়ে মেরে ফেলবে! কী নিষ্ঠুর মাগো! তার চে’ মা ও সন্তান একসঙ্গে মরে গেলেই ভালো! গলায় দড়ি দিতে গিয়ে ধরা পড়ে গেল সে প্রতিবেশীর চোখে! নিয়তি সেখানেও তাকে আটকে দিল।

রাগে-দুঃখে-লজ্জায় দাদা---বৌদি ও ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে অন্য শহরে।

একমাত্র সহায় আর ভরসা অর্চনার ছোটবোন আর তার প্রেমিক রতু রায়চৌধুরী, একদা প্রভাবশালী জমিদারের বংশধর। অসম্ভব সাহসী এবং সংবেদনশীল ছেলেটি বললো, অর্চনাদি তুমি একদম চিন্তা করো না! আমি তো আছি। আমি যেভাবেই পারি একটা পথ খুঁজে বের করবোই। আমার বড়দির এমন হলে আমি তাই করতাম। তুমি ভেঙ্গে পড়ো না। খাওয়া-নাওয়া করো। বাচ্চাটি যাতে কষ্ট না পায়, তা হলে অনিমেষদা স্বর্গেও কাঁদবেন। নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও আলো আছে এই অন্ধকার সমাজেও! নিশ্চয়ই আছে! আমি সে আলোর সন্ধানে লড়াই করে যাবো!

অর্চনা শেষ পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছিল। রক্ষা পেয়েছিল সে। মর্যাদা পেয়েছে নির্দোষ অনিমেষের ভালোবাসার সন্তানও, যার মুখ সে দেখতে পারেনি।

কিন্তু কীভাবে রক্ষা পেলো অর্চনা? সে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা! জানতে পড়ুন প্রবীর বিকাশ সরকারের নতুন উপন্যাস ‘কোথাও আলো আছে’!

(পিএস/এএস/জানুয়ারি ২৭, ২০১৭)