গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গাইবান্ধা সদর উপজেলার ঘাগোয়া ইউনিয়নের উত্তর ঘাগোয়া গ্রামে হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন এক বেকার যুবক। নাম তার হাই মিয়া। হাঁস পালন করে তিনি এখন এলাকায় সকলের দৃষ্টি কেড়েছেন। তার অতি অভাবের সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতার ছোঁয়া। তার এ সফলতা দেখে এলাকার অনেকেই হাঁস পালনে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। কেউ বা আবার হাঁস পালন শুরুও করে দিয়েছেন।

গাইবান্ধা সদর উপজেলা থেকে ৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে দারিয়াপুরে পৌঁছলেই হাই ব্যাপারীর কথা বললেই যে কেউ বলে দিতে পারবে তার হাঁসের খামারের কথা অথবা দারিয়াপুর থেকে রূপারবাজার রোডে ১ কিলোমিটার গেলেই চোখে পড়বে তার বাড়ী আর বাড়ীর ভিতরেই রয়েছে তার হাঁসের খামার। বর্তমানে তার খামারে এখনও ৫শত হাঁস রয়েছে।

সরেজমিনে খামার পরিদর্শন শেষে হাই মিয়ার সাথে কথা বললে তিনি জানান, অভাবের সংসারে মেট্টিক ফেল করে অভিমান করে ঢাকায় গিয়ে রিক্সা চালিয়ে কিছু অর্থ জোগার করে বাড়ীতে এসে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিছু একটা করার। পরে অনেক ভেবে চিন্তে ঠিক করেন হাঁসের খামার গড়ে তোলার। কিন্তু হাঁস পালন সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না তার।

পরে এক বন্ধুর কাছ থেকে হাঁস পালনের ধারণা নিয়ে দারিয়াপুর হাট থেকে ৫০টি হাঁসের বাচ্চা কিনে শুরু করেন হাঁস পালনের যুদ্ধ। কঠোর পরিশ্রম করে প্রথম বছরে হাঁস পালন করে ঋণগ্রস্থ হন ১০ হাজার টাকা। এরপর নিজ স্ত্রী আশামণির অনুপ্রেরণায় ১০ হাজার টাকা ঋণ করে আবার শুরু করেন হাঁসের খামার। সেবারেই তার লাভ হয় ১০/১৫ হাজার টাকা। এরপর তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর তিনি স্ত্রীর সহযোগিতায় ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন হাঁসের হ্যাঁচারী। বর্তমানে তার আকাশ হ্যাচারী নামে একটি হ্যাচারী রয়েছে। যেখানে তার স্ত্রী নিজেই এখন তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন করছেন। তার কাছ থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারা এসে হাঁসের বাচ্চা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি আরও জানান হাঁসের ডিম যখন আকারে ছোট হয়ে আসে বা ডিম দেয়া একেবারে কমে যায় তখন তিনি সেই হাঁসগুলো বিক্রি করে দেন। তা থেকেও লাভ হয় তার ৫০/৭০ হাজার টাকা।
অপর একজন হাঁস পালনকারী সুজন মিয়া জানান, লেখাপড়া শিখে চাকরির আশায় বসে না থেকে অল্প খরচে হাঁসের খামার গড়ে তুলে সহজেই স্বণির্ভর হওয়া যায়। তার মতে লেখাপড়ার পাশাপাশি হাঁস পালন করাটা কোন কষ্টের নয়। তাই এখন তাদের সবার মুখে মুখে একটি-ই শ্লোগান, করবো মোরা হাঁসের চাষ-থাকবো সুখে বারো মাস।

ঘাগোয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান গাইবান্ধা জেলা পরিষদের সদস্য মুহাম্মদ ডিজু বকসি জানান, এক সময় হাই মিয়ার খুব অভাব ছিল বর্তমানে সে হাঁসের খামার দিয়ে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছে।

(এসআইআর/এএস/জানুয়ারি ২৮, ২০১৭)