স্টাফ রিপোর্টার : মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত বাগেরহাটের আব্দুল লতিফ তালুকদারকে সেফহোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আবেদন জানিয়েছেন প্রসিকিউশন।

সোমবার ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে লতিফ তালুকদারকে একদিনের জন্য ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কার্যালয় রাজধানীর ধানমণ্ডির সেফহোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন জানান প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়দুল হক সুমন।

প্রসিকিউশনের আবেদনে বলা হয়েছে, আব্দুল লতিফ তালুকদারসহ বাগেরহাটের অন্য দু’জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে তদন্তে তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। আরো তথ্য-প্রমাণ জানতে এবং একই অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া অন্য দুই আসামি বাগেরহাটের আকরাম খান ও সিরাজুল ইসলাম সম্পর্কে তথ্য জানতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

গত ১১ জুন ভোরে বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার রাঢ়িপাড়া ইউনিয়নের সোলারকোলা গ্রামের বাড়ি থেকে আব্দুল লতিফ তালুকদারকে (৭৫) গ্রেফতার করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। তিনি প্রয়াত জিন্দর আলী তালুকদারের ছেলে।

পরদিন ১২ জুন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে শুনানি শেষে আব্দুল লতিফ তালুকদারকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে গত ১০ জুন ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল-১ এ আব্দুল লতিফ তালুকদারসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানান প্রসিকিউটর সৈয়দ সায়দুল হক সুমন। আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই দিনই ট্রাইব্যুনাল তিনজনের বিরুদ্ধেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

একই অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া অন্য দুই আসামি হলেন, বাগেরহাটের আকরাম খান ও সিরাজুল ইসলাম।

ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানিয়েছে, তিন জনের বিরুদ্ধেই মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তদন্ত চলছে।

গ্রেফতারকৃত আব্দুল লতিফ তালুকদারের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার শাঁখারীকাঠি বাজারে একসঙ্গে ৪২ জনকে হত্যা, বাজারে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং ধর্মান্তরিতকরণের অভিযোগ রয়েছে। ৪২ জনকে হত্যার ঘটনাটি ইতিহাসে শাখারীকাঠি গণহত্যা নামে পরিচিত।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পর ২০০৯ সালে নিমাই চন্দ্র দাস নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বাদী হয়ে আব্দুল লতিফ তালুকদারসহ ২০-৩০ জনের বিরুদ্ধে বাগেরহাটের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।

এ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের তদন্ত কর্মকর্তা জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. হেলাল উদ্দিন বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাগেরহাট জেলায় মোট ৬৩টি মামলা হয়। মামলাগুলো তদন্ত করে ডাকরা গণহত্যা, শাখারীকাঠি গণহত্যাসহ কিছু মামলা আমলে নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো জানান, নিমাই চন্দ্র দাসের দায়ের করা মামলাটি (শাখারীকাঠি গণহত্যা মামলা) গত বছরের ২১ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে পাঠানো হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে গত ১০ জুন মামলার আসামি আব্দুল লতিফ তালুকদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা হাতে পেয়ে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে ঢাকায় পাঠায়।

(ওএস/এটিআর/জুন ১৬, ২০১৪)