দেবাশীষ বিশ্বাস, রাজবাড়ী :রাজবাড়ীর ৫টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ক্লোন পদ্ধতিতে মধুচাষ করছে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মৌচাষীরা। কৃষিপ্রধান একটি জেলা হবার কারনে এই শস্য মৌসুমে মৌচাষীদের আগমন বেড়েছে। সরিষা এবং কালোজিরার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছে মৌমাছিরা। আর ভ্রাম্যমান মৌচাষীরা ক্ষেতের পাশে বাক্স বসিয়ে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে শুরু করছেন। এতে একদিকে যেমন মধু পাওয়া যাচ্ছে, তেমনি ফুলের পরাগায়ণে ফলন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯০০০ হাজার একর জমিতে শস্য চাষ হচ্ছে। যেখান থেকে মৌচাষীরা মধু সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে এই রাজবাড়ীতে ছুটে আসে।
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নলিয়া এলাকায় মৌচাষ করছেন টাঙ্গাইরের সখিপুর উপজেলার মৌচাষী মোসলেম শেখ, তিনি বলেন আমরা টাঙ্গাইল থেকে ৬ জন মৌচাষী এখানে এসেছি। আমাদের ১৩০টি বাক্স রয়েছে যেখান থেকে ৪৫ দিন পরে ৩০-৩৫ মণ মধু সংগ্রহ করা করবো। তিনি আরো বলেন প্রতি কেজি মধুর বাজার মূল্য ২০০-৩০০ টাকা। যেখান থেকে আমাদের ৩ লক্ষ টাকা আয় করা হবে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার বেজকোলা গ্রামে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে আসা মৌচাষি মোঃ উজিয়ার রহমান বলেন আমারা এবছর এখানে ২৫০টি বাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করছি। যেখান থেকে আমরা ৪০-৪৫ দিনের মাঝেই ৪০-৫০ মণ মধু সংগ্রহ করতে পারবো। যার বাজার মূল্য ৪ লক্ষ টাকা। তিনি বলেন যদি একটা জেলাতে সরিষা চাষ ভাল হয় ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার পরপর একটা করে খামরা তৈরি করা যায়।

গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নে সাতক্ষীরা থেকে আসা মৌচাষী রবিউল ইসলাম বলেন, মৌমাছিতে আমরা ৬ মাস পর্যন্ত আয় করি। আমরা এই ছয় মাসে ৪ বার মধু পাই । এই চার বারে ২ লক্ষ টাকা খরচ হয় যেখান থেকে আমরা ১২০ মণ মধু সংগ্রহ করি। যেখনা থেকে ৮ লক্ষ টাকা আয় করে থাকি।

খরচ প্রসঙ্গে মৌচাষীরা বলেন, বছরের ৬ মাস মৌমাছিরা প্রাকৃতিক খাদ্যের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে। বাকী ৬ মাসে চিনিকে প্রধান খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করি। মৌচাষীরা বলেন, ২০০ টি বাক্সে মৌমাছির খাদ্যের জন্য ১১০-১২০ বস্তা চিনি প্রয়োজন হয়।

মৌচাষী মোঃ উজিয়ার রহমান বলেন, আমাদের এখান থেকে ৩-৪টা (স্কায়ার, এপিপি ও হামদার্দ) কোম্পানি মধু সংগ্রহ করে নিয়ে বিদেশে রপ্তানী করে। তিনি বলেন আমাদের উৎপাদিত মধুর সঠিক মূল্য পাই না। আমাদের থেকে কোম্পানি মধু সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াকরণ করে বিদেশে রপ্তানী করে থাকে। তিনি বলেন যদি কয়েকটি জেলায় মধু প্রক্রিয়াকরনের যন্ত্র থাকতো তবে আমরা বেশি লাভবান হতাম।

মৌচাষের সম্ভাবনা নিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারনের উপপরিচালক শ্রীনিবাস দেবনাথ উত্তরাধিকার৭১ নিউজকে বলেন, রাজবাড়ীতে এই শীতমৌসুমে বিভিন্ন জেলা থেকে মৌচাষীরা মৌ উৎপাদনের জন্য আসে। মৌচাষের ফলে ফসলের পরাগায়ন যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি ২০০টি বাক্সে ৪০-৫০ মণ মধু উৎপাদন সম্ভব। তিনি বলেন রাজাবাড়ীতে ৩,৩৫৭ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়ে যেখান প্রায় ১০লক্ষ মৌবাক্স স্থাপন করে কোটি কোটি টাকার মধু উৎপাদন সম্ভব। তিনি আরো বলেন রাজবাড়ীর মত বাংলাদেশে সবচেয়ে সম্ভাবনময় একটি চাষ হচ্ছে মৌচাষ।



(ডিবি/এস/ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৭)