ত্রিশাল(ময়মনসিংহ)প্রতিনিধি :সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘গরু’ সম্বোধন করে স্ট্যাটাস দেওয়ার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ময়মনসিংহের ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল  ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার খন্দকার এহসান হাবিবকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এছাড়াও আওয়ামীলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মন্তব্য,প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তি করায় তথ্য প্রযুক্তি আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।

গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় তার সাময়িক বহিস্কারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ কর্মকর্তা এসএম হাফিজুর রহমানের প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানাযায়।

এদিকে ফেসবুকে ২০১২ সালের অক্টোবর মাসের একটি স্ট্যাটাসে প্রধানমন্ত্রী ও রাজনীতিবিদদের ‘কটূক্তির’ অভিযোগ এনে সাময়িক বহিষ্কারের পর পরই রাতে সহকারী রেজিস্ট্রার এহসান হাবিবের বিরুদ্ধে তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় দুটি মামলাও করা হয়েছে। কোতোয়ালি থানায় স্থানীয় দুই আওয়ামী লীগ নেতা মামলা দুটি করেন। এসব মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারসহ আরো দুই সহকারী রেজিস্ট্রারকেও আসামি করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহিত উল আলম বলেন, ‘ঢাকার শ্যামলীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লিয়াজোঁ অফিসে সিন্ডিকেটের ৫৫তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুই ঘণ্টার বৈঠকে সিন্ডিকেটের ১৪ সদস্যের মধ্যে ১৩ জন উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত আনুযায়ী সহকারী রেজিস্টার খন্দকার এহসান হাবিবকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এহসান হাবিব গত ৩১ জানুয়ারি সকাল ৮টা ২৪ মিনিটে তাঁর ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘পাবলিকের অনেক গরু প্রতিদিন আমি আমার বাড়ির মাঠে ঘাস খেতে দেখেছি।’ এরপর ৮টা ৪০ মিনিটে তিনি আরেকটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে লেখেন, ‘বিষয়টা প্রাইভেট পাবলিকের না। বিষয়টা হলো মেধার। যোগ্যতার। আপনি পাবলিকের গরু নেবেন নাকি প্রাইভেটের মেধা নেবেন।’

এই স্ট্যাটাসের পর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অন্যদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

এ ছাড়াও ২০১২ সালের ১৬ই আগষ্ট একটি ষ্টেটাসে ”১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীআমাদের জনগনের উপর সর্বাত্বক সশস্ত্র এক ফ্যাসিষ্ট আক্রমন শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের সমগ্র অংশ যেমন দেশের মানুষকে পাকিস্তানি আক্রমনের চরম বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়ে আত্মরক্ষার জন্য ভারতে পাড়ি দিয়েছিল,ঠিক তেমনি ভাবেই ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর তারা নিজেদের রক্ষা করার জন্য গা ঢাকা দিয়েছিল। এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিত স্থানীয় দুজন আওয়ামীলীগ নেতা মামলা দায়ের করে।
যদিও সহকারী রেজিস্ট্রার দাবি করেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গরু আখ্যা দিয়ে কোনো পোস্ট দেইনি।’

উপাচার্য মোহিত উল আলম আরো জানান, এ ঘটনা তদন্তে ২ ফেব্রুয়ারি পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিতে আরো দুজন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ সদস্যকে যোগ করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর এহসান হাবিবের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রধানমন্ত্রী ও রাজনীতিবিদদের ‘কটূক্তির’ অভিযোগ এনে এহসান হাবিবের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। একটি মামলা করেছেন পৌরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি দিদারুল ইসলাম। এই মামলায় সহকারী রেজিস্ট্রার ছাড়াও রেজিস্ট্রার আমিনুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। অপর মামলাটি বাদী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি নুরুল বাকি খান। এই মামলায় এহসান হাবিব, রেজিস্ট্রার ছাড়াও সহকারী রেজিস্টার আফরোজা সুলতানা, সহকারী রেজিস্টার (শিক্ষা) আমিনুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, মামলাটি তদন্ত করছেন উপপরিদর্শক (এসআই) ঝুটন কুমার বর্মণ। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

২০১২ সালের ১০ অক্টোবর এহসান হাবিব এই স্ট্যাটাসটি দিয়েছিলেন ময়মননিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি নতুন ভবন নিয়ে। এটি তৈরি হওয়ার পরও উদ্বোধনের জন্য কিছু সময় অব্যবহৃত ছিল।

এ দিকে সহকারী রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আজ সকালেও বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভকারীরা ক্যাম্পাসে মিছিল বের করে এবং পরে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এসময় ছাত্রলীগ নেতাদের তোপের মুখে আন্দোলনকারীরা নিজেদের সরিয়ে নেয়। সাধারন শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন স্থানীয় ছাত্রলীগ আমাদের আন্দোলন করতে বাধা প্রদান করছে।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ছেলেকে নিয়োগ দেওয়ার জন্যই সহকারী রেজিস্ট্রার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গরু বলেছেন। কারণ, উপাচার্যের ছেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।







(এমএন/এস/ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৭)