নওগাঁ প্রতিনিধি : ইতোমধ্যেই স্বাধীনতার ৪৫ বছর কেটে গেছে। বিশ্বের দরবারে জাতি এখন স্বাধীন হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। বিচার হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের, বিচার হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুনিসহ জাতীয় চার নেতার খুনিদের। কিন্তু ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা যুদ্ধে কতজন শহীদ হয়েছেন, তার খবর কি কেউ জানেন? এর হিসাব কি কেউ রেখেছিল? এদেশে কতগুলো বধ্যভূমি আছে তা কি জানে নতুন প্রজন্ম? কেউ এসব খবর না রাখলেও, না জানলেও নওগাঁর “একুশে পরিষদ” নতুন প্রজন্মকে তা জানাতে এবং ওইসব আত্মত্যাগী মানুষদের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে নিজেদের দায়বদ্ধতা থেকে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রায় দুই যুগ ধরে।

বিগত ১৯৯৪ সালে ভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে ১৮ ফেব্রুয়ারি ড. জোহা দিবস পালনের মধ্য দিয়ে সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে। শুরুতে একুশে উদযাপন পরিষদ নাম থাকলেও কাজের পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি নাম পরিবর্তন করে ‘ উদযাপন’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘একুশে পরিষদ নওগাঁ’ নামকরণ করা হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে মূল চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের আর্দশকে মূল আর্দশ করে বেশ কিছু মানুষ কাজ করে যাচ্ছেন স্বার্থহীন ভাবে। তাদের স্বার্থহীন শ্রম আর প্রচেষ্টায় দেশবাসীসহ পুরো জাতি ও নতুন প্রজন্ম জানতে শুরু করেছে, কাদের শ্রমে এ বাংলা ভাষা আর কাদের রক্তের বিনিময়ে এ স্বধীনতা অর্জন করা হয়েছে।

‘একুশে পরিষদ নওগাঁ’র গৃহিত কাজগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের মধ্যদিয়ে অমর একুশে পালন করা এবং বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে বিজয় দিবস পালন করা। এছাড়া বিজয় দিবস উপলক্ষ্যেও এভাবেই গ্রহন করা হয় চার দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী।

তবে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আলোর মিছিল সারা শহরকে জানিয়ে দেয় বিজয়ের আগাম বার্তা। প্রতিবছর কোন না কোন দেশ নন্দিত ব্যক্তি এ মিছিলকে করে তোলেন আরও পরিপূর্ণ। বছরের ১২ মাস কোন না কোন আয়োজন থাকেই তাদের । এ জেলার বিভিন্ন গণকবর, বধ্যভূমি খুঁজে বের করা এবং সেই মানুষদের সম্মান জানাতে সেখানে গণহত্যা দিবস পালন করে থাকে একুশে পরিষদ।

ভাষা সংগ্রামীসহ বিশিষ্ট গুণিজনদের জন্মদিনে আলোচনা সভা ও মৃত্যু দিবসে স্বরণসভাসহ সাম্প্রদায়িকতা, সামাজিক অবক্ষয় ও অনৈতিকতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছে একুশে পরিষদ নওগাঁ । বিভিন্ন ব্যক্তির সহযোগিতা আর নিজেদের পকেটের টাকা দিয়েই চলছে এসব কর্মসূচী। তবে মাঝে মাঝে হোঁচট খেলেও থেমে নেই কাজ। দিন দিন কাজের পরিধি বেড়েই চলেছে সংগঠনটির ।

একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি এ্যাডভোকেট ডিএম আব্দুল বারী বলেন, নতুন প্রজন্মকে ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতার যুদ্ধ সর্ম্পকে জানাতে নিজেদের চেতনাবোধ থেকেই সাধ্যমত কাজ করছি। ভাষা সংগ্রামীদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হোক এই দাবি নিয়ে বর্তমানে কাজ করছি। এই দাবিটি বাস্তবায়ন হলে আমাদের শ্রম সার্থক হবে ।

নওগাঁর জেলা প্রশাসক ড. মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, একুশে পরিষদ স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করছে সাংস্কৃতির উন্নয়ন ঘটাচ্ছে সেখানে আমরা সমৃদ্ধ হচ্ছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্যই তাদের আর্থিক সহযোগিতা করা হবে ।

(বিএম/এএস/ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৭)