আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সামরিক অভিযান বন্ধের পর স্বজন অথবা ফেলে আসা সম্পদ ফিরে পেতে বেশ কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশ থেকে সেখানে ফিরে গেছেন।

 

কক্সবাজারের কুতুপালাং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান আবু সিদ্দিক ডয়েচ ভেলের বরাতে জানান, ‘‘নির্যাতনের মুখে অনেকে তাঁদের বৃদ্ধ বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজনকে ফেলে রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে চলে এসেছিলেন। এঁদেরই কেউ কেউ এখন আবার বাবা-মা ও স্বজনরা কেমন আছেন – তা দেখতে সময় বুঝে মিয়ানমারে ফিরে যাচ্ছেন। সুযোগ পেলেই তাঁরা বাবা-মাকে নিয়ে কক্সবাজারে ফিরে আসবেন। দু-একজন ইতিমধ্যে এসেছেন বলেও শুনেছি।''

তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা গেছেন তাঁদের কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, সেখানকার পরিস্থিতি এখনো ভালো না। সামরিক অভিযান বন্ধের কথা বলা হলেও এখনও বন্ধ হয়নি। এমনকি কয়েকদিন আগেও চারজন নিহত হয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি।''

তিনি আরো জানান, ‘‘আমার জানা মতে যাঁরা মিয়ানমারে গেছেন, তাঁরা সিঙ্গেল। কোনো পরিবার ফিরে যায়নি। তাছাড়া সংখ্যায় তাঁরা চার/পাঁচশ'র বেশি হবে না।''

অন্যদিকে লেদা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান দুদু মিয়া ভয়েচ ভেলের বরাতে জানান, ‘‘মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা এক হাজারের মতো হতে পারে।''

তিনি বলেন, ‘‘অনেকে ভয়ে পালিয়ে এসেছিলেন। তাঁদের ওপর তখনো আক্রমণ হয়নি। তাঁদের কেউ কেউ ফিরে গেছেন ফেলে আসা বাবা-মাকে দেখতে, তাঁরা কেমন আছেন তা জানতে। আবার অনেকে স্ত্রী-সন্তান ফেলে এসছেন। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি একটু ভালো থাকায় তাঁরা এই সুযোগ নিচ্ছেন। তাঁদের খোঁজ নিতে যাচ্ছেন। আবার অনেকে পালানোর সময় মাটির নীচে মূল্যবান ধন-সম্পদ পুঁতে রেখে এসেছেন। কেউ কেউ তার খোঁজেও গেছেন।''

তিনি আরও বলেন, ‘‘তবে কেউই মিয়ানমারে থাকার জন্য গেছেন বলে মনে হয় না। তাঁরা পরিস্থিতি দেখে বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে আবারো ফিরে আসতে পারেন।''

টেকনাফে বিজিবির কমান্ডার লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সম্প্রতি রাখাইন প্রদেশে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে আসার প্রেক্ষাপটে অনেক রোহিঙ্গা ফিরছেন। তবে কী পরিমাণ ফেরত যাচ্ছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই।

ফেরত যাওয়ার প্রবণতার কথা সংবাদমাধ্যমের কাছে স্বীকার করে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আলী হোসেন বলেন, ‘‘সপ্তাহখানেক ধরে এমন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তবে এই সংখ্যাটা একেবারেই নগণ্য।''

বাংলাদেশে কক্সবাজারে দু'টি নিবন্ধিত ক্যাম্পে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী আাছে। এর বাইরে আরো চার লাখ অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী আছেন বাংলাদেশে। গত অক্টোবর মাসে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন প্রদেশে মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির উপর হামলা শুরুর পর থেকে শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন, হাজারো রোহিঙ্গা গৃহহারা হয়েছেন এবং প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন৷''

(ওএস/এসএস/ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৭)