স্টাফ রিপোর্টার : ঐতিহ্যবাহী জামদানি বাংলাদেশের ‘নিজস্ব’ পণ্য। কিন্তু জামদানির আগে বিভিন্ন ভৌগলিক স্থানের নাম ব্যবহার করে এর সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা চলছে।

এ ঐতিহ্যবাহী পণ্য রক্ষায় প্রয়োজনে জামদানির স্বত্ব দাবিকারী দেশগুলোর সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার মত দিয়েছেন রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারের আলোচকরা।

মঙ্গলবার সিরডাপ মিলনায়তনে এই সেমিনার হয়।

‘ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য সুরক্ষার গুরুত্ব: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এবং বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ (এনসিসিবি)।

বক্তারা বলেন, ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের মালিকানা বিশ্ব বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ। কিন্তু সম্প্রতি ভারত জামদানির আগে বিভিন্ন ভৌগলিক নাম জুড়ে দিয়ে এর সুনামকে নষ্ট করার চেষ্টা করছে। তারা তাদের দেশের জামদানিকে ‘উপাদা জামদানি’ এবং বাংলাদেশি জামদানিকে ‘ঢাকায় জামদানি’ বলে অভিহিত করছে।

ইতিমধ্যে ২০০৯ সালে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ থেকে ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে উপাদা জামদানি রেজিস্ট্রেশন করেছে। এছাড়া বাংলাদেশের জামদানিকে তারা ঢাকায় জামদানি হিসেবে অভিহিত করেছে। কিন্তু আমরা বলতে চাই জামদানি বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য। তাই এর আগে বিভিন্ন ভৌগলিক স্থানের নাম জুড়ে দিয়ে জামদানিতে কোনো ভিন্নতা আনা যাবে না বলে বক্তারা মত দেন।

সেমিনারে জামদানি শুধুমাত্র বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য এমন যুক্তির পক্ষে বিভিন্ন ঐতিহাসিক প্রমাণাদি উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইফতেখার ইকবাল। তিনি তার গবেষণা পত্রে বলেন, জামদানি তৈরি করতে যেসব কাঁচামাল, আবহাওয়া, দক্ষতা প্রয়োজন তা শুধুমাত্র বাংলাদেশেই আছে। তাই অন্য কোনো দেশ যদি এ পণ্যের মালিকানা দাবি করে তা উচিত হবে না।

এছাড়া তিনি জামদানি তৈরিতে পানির ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে বলেন, জামদানিকে মসৃন করতে যে পানি দরকার তা বাংলাদেশের শীতলক্ষ্যা নদীতে রয়েছে। তাই শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী স্থানগুলোতে জামদানি পল্লী গড়ে ওঠে। তবে বিভিন্ন সময় অন্যান্য দেশ এদেশে থেকে তাঁতি নিয়ে গিয়ে তাদের দেশে জামদানি তৈরির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। তাই এটা বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য।

তিনি তার গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে ‘ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য (রেজিস্ট্রেশন ও প্রটেকশন) আইন ২০১৩ প্রণয়ন করেছে। যা ইতিমধ্যে জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য নির্ধারণে এখনও কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এ সুযোগে ভারত সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য রেজিস্ট্রেশন করেছে যার উৎপত্তি বাংলাদেশে।

ইফতেখার ইকবাল বলেন, বাংলাদেশে আইন থাকলেও তা কার্যকর না থাকায় তারা এমনটি করতে পেরেছে। ভারত জামদানি শাড়িকে তাদের দেশের পণ্য হিসেবে ‘উপাদা জামদানি’ হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করেছে। যার মাধ্যমে আমাদের ঐতিহ্যবাহী এ পণ্যকে তারা নিজেদের পণ্য হিসেবে পরিচিত করানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা জামদানি নামের আগে এমন কোনো উপাধি চাই না। কারণ জামদানি বলতে শুধু ঢাকার জামদানিকেই বুঝানো হয়।

এসময় বক্তারা ভৌগলিক নির্দেশক আইনের দ্রুত বাস্তবায়ন দাবি করে বলেন, সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে জামদানিকে আমাদের দেশের ঐতিহ্য পণ্য হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি করাবে। প্রায়োজনে অন্যদেশগুলোর সঙ্গে আইনি লড়াই করতে হবে।

(ওএস/এটিআর/জুন ১৭, ২০১৪)