মো. মনিরুল ইসলাম মনির : প্রধানমন্ত্রীর “আমাদের রূপকল্প-২০২১” অনুযায়ী আগামী ২০২১ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাবে। বিদ্যুৎ খাতের ক্রমাগত উন্নয়নের মাধ্যমে গত আট বছরে ৮০টি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১৫,০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে মোট সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ৯,৮৯৩ সার্কিট কিলোমিটার এবং বিতরণ লাইনের পরিমাণ ৩ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার। দেশের সকল মানুষের জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে পল্লী বিদ্যুতের মাধ্যমে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু উপজেলা শতভাগ বিদ্যুৎতায়ন সম্পন্ন হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় মেহেরপুরের মুজিবনগর শতভাগ মানুষ এ সুবিধা ভোগ করতে যাচ্ছে।

মেহেরপুর পল্লী বিদুৎ সমিতি-১ এর মহা ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম বলেন, এত দ্রুত সময়ের মধ্যে মুজিবনগর উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনাকে সরকারের বড় সাফল্য বলে মনে করছি। এটি এখানকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও বাণিজ্যের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি। মুজিব নগরের ভৌগলিক আয়তন ১১১ বর্গ কি.মি., ইউনিয়ন সংখ্যা ০৪টি, গ্রামের সংখ্যা ৩২টি, নির্মিত লাইনের পরিমান ৩০২ কি.মি.,উপকেন্দ্রের সংখ্যা ০১টি, (১০এমভিএ), অভিযোগ কেন্দ্র ০১টি, অর্থ ব্যয় ৪৫ কোটি টাকা, মোট সংযোগ দেওয়া হয়েছে ২১৫৭১টি, আবাসিক গ্রাহক ২০৬৯২জন, বাণিজ্যিক গ্রাহক ৪০৮ জন, শিল্প গ্রাহক ১৩১ জন, বৃহৎ শিল্প গ্রাহক ০২ জন, সেচ গ্রাহক ১১৩ জন, সিআই গ্রাহক ২২৫জন, এছাড়াও চাহিদা রয়েছে ৬.০০ মে.ও. সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে ৬.০০মে.ও.। এ থেকে বার্ষিক রাজস্ব ধরা হয়েছে ৬,১১,৭৯১২৯.০০টাকা।

মেহেরপুর ১ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন জানান, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়া বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল। মুজিবনগর উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন তারই বাস্তবায়ন। এখন গ্রামের ঘরে ঘরে জ্বলছে বৈদ্যুতিক বাতি, ঘুরছে পাখা, চলছে টিভি। যা দৈনন্দিন জীবনে স্বাচ্ছন্দ এনে দিয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীরা বিদ্যুতের আলোয় করছে পড়াশুনা। গতিশীল হয়েছে ব্যবসা বাণিজ্য।

তিনি আরো জানান, ১ মার্চ বুধবার সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। এ উপলক্ষ্যে মুজিবনগর উপজেলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সরকারের দূরদর্শী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে জ্বালানি খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার দিকে গুরুত্বারোপ করে সরকার বিগত আট বছরে বেশ কিছু চুক্তি সম্পাদন করেছে।

বাংলাদেশ-ভারতের সহযোগিতা চুক্তির আওতায় বর্তমানে ভারত থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে এবং আরও ৫০০ মেগাওয়াট আমদানির জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি নেপাল এবং ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ক্রমাগত জেলার গ্রামীণ এলাকায় পর্যায়ক্রমে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর ফলে ইউনিয়ন তথ্য সেবা, নতুন গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন, প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সর্বস্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটারসহ আধুনিক প্রযুক্তির উপকরণ ব্যবহারকরণ, ইন্টারনেট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে পরিবেশ, স্বাস্থ্য, নারী অধিকার ও সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ ব্যপক সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। তিনি আরো বলেন মেহেরপুর ৭৩ কোটি টাকার ভৈরব খনন, বাইবাস সড়ক সহ ৫৫ কোটি টাকার বিভিন্ন সড়ক তৈরি মেহেরপুরের জনগণের সুষ্ঠু জীবনধারা যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের পূর্বশর্ত।

ভিশন-২০২১ লক্ষ্যপূরণ এবং ঘোষিত সময়ের আগেই দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের প্রক্রিয়াটি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ওপর নিভর্র করে। এ লক্ষ্যেই জেলা সহ সারা দেশে ব্যাপকভাবে যোগাযোগ খাতে উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে নেওয়া হচ্ছে নতুন নতুন পরিকল্পনাও।

তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক কোনো প্রতিহিংসা নয়, কেবল জেলার মানুষের দুর্দশা দূর করার জন্যই আমি রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছি। মেহেরপুরের উন্নয়ন ব্যবস্থা নিশ্চিত করাই হবে আমার প্রধান লক্ষ্য।

শিগগিরই দেশ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের যে প্রক্রিয়া সেটা শুরু হয়ে গেছে। দেশের এই সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন কেবল দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই শোভা পায়। উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকুক। এগিয়ে যাক দেশ। সমৃদ্ধ হোক বাঙালির জীবনধারা।

(এমআইএম/এএস/ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭)