চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : চুয়াডাঙ্গায় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের কারণে জেলার ১৯টি পেট্রোল পাম্পের মধ্যে ১১টি পাম্প সবধরণের জ্বালানি তেল শূন্য হয়ে পড়েছে।

গত বুধবার থেকে চুয়াডাঙ্গায় টানা ৭ দিনের ধর্মঘটের কারণে ডিপো থেকে জ্বালানি তেলবাহী কোন ট্যাংকলরি চুয়াডাঙ্গাতে ঢুকতে না পারায় এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।

উল্লেখ্য, চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুকসহ ৫ জন সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হওয়ার মামলায় গত বুধবার মানিকগঞ্জের একটি আদালত চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের বাসচালক জামির হোসেনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেন। এই আদেশের পরপরই চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস-ট্রাক সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দেয়। সেই থেকেই চুয়াডাঙ্গায় টানা ৭দিন ধর্মঘট চলছে। এতে খুলনার দৌলতপুর ডিপো থেকে তেলবাহী ট্যাংকার চুয়াডাঙ্গাতে ঢুকতে না পারায় গত কয়েকদিন ধরেই জেলার পাম্পগুলোতে জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দেয়। সেই সংকট আজ আরো বড় আকার ধারণ করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকেই চুয়াডাঙ্গা শহরের অধিকাংশ তেল পাম্পই তেলশূন্য হয়ে পড়েছে। এমন কী মোটর সাইকেল চালকদেরও তেল নিতে এসে অনেকটা নিরাশ হয়েই ফিরতে হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা শহরের মশিউর রহমান নামে এক মোটর সাইকেল চালক তেল না পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ‘ধর্মঘটের কারণে যাত্রীদের পাশাপাশি মোটর সাইকেল আরোহীরাও জিম্মি হয়ে পড়েছি’ বলেন তিনি ।

টানা ধর্মঘটের কারণে চলতি বোরো মৌসুমে সেচ নিয়েও বিপাকে পড়েছে জেলার হাজার হাজার কৃষকরা । গতকাল দিনভর বেশ কয়েকজন কৃষককে ডিজেলের জন্য বিভিন্ন পাম্পে হন্যে ঘুরতে দেখা যায়।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জের কৃষক বিশারত আলী জানান, সকাল থেকেই জেলা শহরে সাতটি তেল পাম্পে ডিজেলের জন্য ঘুরেও এক লিটার তেলও পাওয়া যায়নি। একই কথা জানালেন সদর উপজেলার কাথুলী গ্রামের কৃষক রবজেল মন্ডল। তিনি জানান, এখন বোরোর ভরা মৌসুম চলছে। এসময় জমিতে সেচ দিতে না পারলে বিপর্যয় ঘটবে বোরো চাষে ।

জ্বালানি তেল ও ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্র বলছেন, জেলার ১৯টি তেল পাম্পের মধ্যে রয়েছে, জেলা সদরে ১০টি, আলমডাঙ্গায় ২টি, দামুড়হুদায় ৩টি এবং জীবননগর উপজেলায় রয়েছে ৪টি ।

এ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের দাবি, ১৯টি তেল পাম্পের মধ্যে মঙ্গলবার দুপুরের পর ১১টি তেল পাম্পে ইতিমধ্যে ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেন শেষ হয়ে গিয়েছে। তেল শূন্য ফিলিং স্টেশনগুলো হলো হচ্ছে, চুয়াডাঙ্গার মোজাম্মেল হক ফিলিং স্টেশন, জোয়ার্দ্দার ফিলিং স্টেশন, মামুন ফিলিং স্টেশন, ইমরান ফিলিং স্টেশন, সীমান্ত পেট্রোলিয়াম, হাইওয়ে ফিলিং স্টেশন, আলমডাঙ্গার হক ফিলিং স্টেশন ও উত্তরা ফিলিং স্টেশন, দামুড়হুদা ফিলিং স্টেশন, কার্পাসডাঙ্গা ফিলিং স্টেশন ও জীবননগরের নাসিম ফিলিং স্টেশন।

জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতি ও ট্যাংকলরি ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি হাবিল হোসেন জোয়ার্দ্দার জানান, টানা ৭দিন পরিবহন ধর্মঘটের কারণে জেলার ১৯টি তেল পাম্পের ১১টিই এখন তেল শূন্য । বাকী ৮টি তেল পাম্পও আজ বুধবারের মধ্যেই শেষ হবে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে চুয়াডাঙ্গা জেলা সব ধরণের জ্বালানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করবে । সংকটের বিষয়টি অবহিত করে জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছে জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতি ও ট্যাংকলরি ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন ।

(ওএস/এসপি/মার্চ ০১, ২০১৭)